ঢাকা   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আকাশে অশ্রু-রক্তের সাক্ষ্য: ইতিহাসের ১০ ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা

অফবিট

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ১২ জুন ২০২৫

আকাশে অশ্রু-রক্তের সাক্ষ্য: ইতিহাসের ১০ ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা

বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ ও বাণিজ্যে বিপ্লব এনেছে উড়োজাহাজ। উন্নত প্রযুক্তি ও কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণে একে সবচেয়ে নিরাপদ পরিবহন মাধ্যম হিসেবে ধরা হলেও, কিছু দুর্ঘটনা সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে। ইতিহাসে এমন কিছু দুর্ঘটনা আছে যেগুলো কেবল প্রাণহানি নয়, প্রভাব ফেলেছে গোটা বিমান শিল্পেই। নিচে তুলে ধরা হলো ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ১০টি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ—

১. টেনেরিফ ট্রাজেডি (১৯৭৭)
স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে দু’টি বোয়িং উড়োজাহাজের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারান ৫৮৩ জন। কুয়াশা, বিভ্রান্তিকর নির্দেশনা ও রেডিও সংকেত বিভ্রাটের কারণে এই ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে।

২. জাপান এয়ারলাইনস (১৯৮৫)
জাপানে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গিরিখাতে বিধ্বস্ত হয় একটি উড়োজাহাজ। এতে ৫২০ জন নিহত হন। জীবিত ছিলেন মাত্র চারজন।

৩. চরকি দাদড়ির আকাশদুর্ঘটনা (১৯৯৬)
ভারতের দিল্লির আকাশে সৌদি এয়ারলাইনস ও কাজাখস্তান এয়ারলাইনসের সংঘর্ষে প্রাণ হারান ৩৪৯ জন। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নির্দেশনা না মানায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

৪. প্যারিস ডিসি-১০ দুর্ঘটনা (১৯৭৪)
টার্কিশ এয়ারলাইনের ডিসি-১০ উড়োজাহাজের কার্গো দরজা খুলে পড়ে প্যারিসে। মারা যান ৩৪৬ জন। পরবর্তীতে এই মডেলের উড়োজাহাজের নকশা পরিবর্তন করা হয়।

৫. এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২ (১৯৮৫)
আয়ারল্যান্ড উপকূলে বোমা হামলায় বিধ্বস্ত হয় এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট। মারা যান ৩২৯ জন, যাঁদের অধিকাংশই কানাডার ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিক।

৬. সৌদিয়া ফ্লাইট ১৬৩ (১৯৮০)
উড্ডয়নের পরপরই আগুন ধরে যায় রিয়াদগামী একটি ফ্লাইটে। দম বন্ধ হয়ে মারা যান ৩০১ আরোহী। পাইলট ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং করলেও উদ্ধার সম্ভব হয়নি কাউকে।

৭. ইরান এয়ার (১৯৮৮)
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্রে পারস্য উপসাগরে গুলি খেয়ে বিধ্বস্ত হয় যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ। নিহত হন ২৯০ জন। যুক্তরাষ্ট্র পরে ‘ভুল করে’ গুলি করার দাবি করে।

৮. ইরান বিপ্লবী গার্ড দুর্ঘটনা (২০০৩)
ইলিউশিন মডেলের উড়োজাহাজ খারাপ আবহাওয়ায় বিধ্বস্ত হয় কেরমানে। মৃত্যু হয় ২৭৫ জনের, যাঁদের বেশিরভাগই ছিলেন বিপ্লবী গার্ড সদস্য।

৯. শিকাগোর আমেরিকান এয়ারলাইনস (১৯৭৯)
বাঁ পাশের ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় বিধ্বস্ত হয় ফ্লাইট। ২৭৩ আরোহীর সবাই মারা যান।

১০. কোরিয়ান এয়ার (১৯৮৩)
সোভিয়েত ইউনিয়নের মনোরন দ্বীপের আকাশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ গুলি করে ভূপাতিত করে সোভিয়েত সেনাবাহিনী। নিহত হন ২৬৯ জন।

এই ১০টি ঘটনা শুধু বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাস নয়, বরং প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা উন্নয়নের পেছনের করুণ প্রেক্ষাপট। প্রতিটি দুর্ঘটনাই রেখে গেছে শোক, শিক্ষা ও সতর্কতার বার্তা।