ঢাকা   বৃহস্পতিবার ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

থ্যালাসেমিয়া: সচেতনতা, চিকিৎসা ও মুক্তির পথ

স্বাস্থ্য

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৯:৩৭, ৭ মে ২০২৫

থ্যালাসেমিয়া: সচেতনতা, চিকিৎসা ও মুক্তির পথ

থ্যালাসেমিয়া—রক্তের এমন একটি জটিল রোগ, যা বংশানুক্রমে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে। ক্রোমোজোমঘটিত এই রোগের বাহক আমাদের দেশের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ। প্রতিবছর ৮ মে আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। থ্যালাসেমিয়া প্রধানত দুই ধরনের—রক্ত নির্ভরশীল (ট্রান্সফিউশন ডিপেন্ডেন্ট) এবং রক্ত নির্ভরশীল নয়। যাঁরা রক্তের ওপর নির্ভরশীল, তাঁদের মাসে অন্তত একবার রক্ত নিতে হয়, যা রোগীর জীবনমানকে করে তোলে দুর্বিষহ।

প্রতিরোধই প্রথম করণীয়

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের মাধ্যমে। প্রথমত, বিয়ের আগে নারী ও পুরুষ উভয়ের রক্ত পরীক্ষা করা জরুরি। যদি দেখা যায়, উভয়েই এই রোগের বাহক, তবে তাঁদের সন্তান থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ২৫ শতাংশ। দ্বিতীয়ত, বাহক দম্পতির ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় প্রিন্যাটাল স্ক্রিনিং করিয়ে নেয়া উচিত, যাতে গর্ভস্থ শিশুর থ্যালাসেমিয়া ঝুঁকি আগেই নির্ধারণ করা যায়। তৃতীয়ত, ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের (IVF) মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ামুক্ত ভ্রূণ নির্বাচন করে মাতৃগর্ভে প্রতিস্থাপন করাও একটি আধুনিক উপায়।

চিকিৎসায় এসেছে নতুন দিগন্ত

আগে থ্যালাসেমিয়া রোগের মূল চিকিৎসা ছিল নিয়মিত রক্ত পরিসঞ্চালন। তবে এখন আধুনিক চিকিৎসা ও দক্ষ রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে হিমোগ্লোবিন চেইনের ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই রক্তের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনা সম্ভব। কারণ, অপ্রয়োজনীয় রক্ত দেওয়া থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে—যেমন শরীরে অতিরিক্ত আয়রন জমে যাওয়া, হৃদরোগ, লিভার সমস্যা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা প্রভৃতি জটিলতা দেখা দেয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রক্ত নেওয়া উচিত নয়।

রোগমুক্তির সম্ভাবনা

থ্যালাসেমিয়ার সম্পূর্ণ চিকিৎসার দুটি আধুনিক উপায় রয়েছে। এক, জিন থেরাপি, যা এখনো বাংলাদেশে চালু হয়নি। দুই, অ্যালোজেনিক স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্ট, যা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাফল্যের সঙ্গে কার্যকরভাবে এবং তুলনামূলক কম খরচে করা হচ্ছে। রোগের জটিলতা বিশ্লেষণ করে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে থ্যালাসেমিয়াকে নিয়ন্ত্রণে আনা, এমনকি নির্মূল করাও সম্ভব।

থ্যালাসেমিয়া শুধু একটি রোগ নয়, এটি একটি সামাজিক চ্যালেঞ্জ। তাই প্রতিরোধ, সচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমেই এই রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব।