ঢাকা   শনিবার ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ তলানিতে

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:১৩, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ তলানিতে

রাজনৈতিক, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও নিয়ন্ত্রক পরিবেশ ঘিরে অনিশ্চয়তার কারণে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। নভেম্বরে (১৫ নভেম্বর পর্যন্ত) বিদেশি লেনদেন নেমে এসেছে মাত্র ১০ মিলিয়ন ডলারে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন মাসিক লেনদেন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকেই বিদেশি লেনদেনে ধারাবাহিক পতনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। জুলাইয়ে যেখানে লেনদেন ছিল ৪০ মিলিয়ন ডলার, আগস্টে তা কমে দাঁড়ায় ৩১ মিলিয়নে। সেপ্টেম্বরে সাময়িকভাবে ৩৬ মিলিয়ন ডলারে উঠলেও অক্টোবরে আবার নেমে আসে ৩০ মিলিয়নে। বিশ্লেষকদের মতে, নভেম্বরে তীব্র পতন স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে—উচ্চ অনিশ্চয়তার মধ্যে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

শীর্ষস্থানীয় এক ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে ‘ডিফেন্সিভ’ অবস্থানে রয়েছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধীরগতির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং বাড়তে থাকা উৎপাদন ব্যয় তাদের সতর্ক করে তুলেছে। তাঁর ভাষায়, “বিদেশি বিনিয়োগকারীরা স্থিতিশীলতা ও নীতির ধারাবাহিকতা চান। এসব স্পষ্ট না হলে তারা বিনিয়োগ বাড়ানোর বদলে কমিয়ে আনেন।”

তিনি আরও জানান, বছর শেষের আগে মুনাফা তুলে নেওয়া উদীয়মান ও ফ্রন্টিয়ার বাজারে স্বাভাবিক প্রবণতা হলেও এবার জাতীয় নির্বাচন ঘিরে উদ্বেগ ও সাম্প্রতিক নিয়ন্ত্রক পরিবর্তনের কারণে বিক্রির চাপ বেড়েছে। একই সঙ্গে উচ্চ ব্যয় ও সরবরাহ সংকটে অনেক বড় কোম্পানির মুনাফা মার্জিন কমে যাওয়ায় শেয়ারের মূল্যায়ন আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে না।

বিশ্লেষকদের মতে, গুণগত মানসম্পন্ন বিনিয়োগযোগ্য শেয়ারের সীমিত সরবরাহ বিদেশি তহবিলের জন্য একটি কাঠামোগত সমস্যা। দীর্ঘদিন উল্লেখযোগ্য নতুন তালিকাভুক্তি না হওয়া এবং মার্জিন ঋণসহ নীতিগত ঘন ঘন পরিবর্তন বিদেশি বিনিয়োগের পথে বাড়তি বাধা তৈরি করছে।

এদিকে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শীর্ষ কোম্পানিগুলোতে বিদেশি মালিকানায় ধীর পতন দেখা গেছে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, প্রাইম ব্যাংক ও গ্রামীণফোনে বিদেশি শেয়ারহোল্ডিং সামান্য কমলেও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, বেক্সিমকো ফার্মা ও ব্র্যাক ব্যাংকে তুলনামূলক স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি পুরোপুরি প্রস্থান নয়; বরং পোর্টফোলিও পুনঃভারসাম্যের ইঙ্গিত, তবে সামগ্রিক প্রবণতা দুর্বলই রয়ে গেছে।

আঞ্চলিক বাজারের সঙ্গে তুলনায়ও নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। ডিএসইএক্স ২.৮০ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৯৬৩ পয়েন্টে বন্ধ হয়েছে, যেখানে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত ও পাকিস্তানের প্রধান সূচকগুলো উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। এই তুলনামূলক দুর্বলতা সামনে দিনে বিদেশি আগ্রহ আরও কমাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইবিএল সিকিউরিটিজের মাসিক বাজার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংশোধিত মার্জিন ঋণ নীতি এবং ব্যাংকিং খাতের চলমান পুনর্গঠন বাজারকে চাপে রেখেছে। ফলে শেয়ারবাজার টানা তৃতীয় মাসের মতো লোকসানের ধারা বজায় রেখেছে।

নভেম্বরের শুরুতে পাঁচটি সমস্যাগ্রস্ত ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত হওয়াও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও দুর্বল হয়। তবে দরপতনের সুযোগে প্রাতিষ্ঠানিক ও অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা শক্তিশালী মৌলভিত্তি ও তুলনামূলক কম পিই অনুপাতের শেয়ারে ধীরে ধীরে অবস্থান নিচ্ছেন, যা বাজারে আংশিক স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।