ঢাকা   শনিবার ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

মশিউর কেলেঙ্কারি: ৭ হাজার বিনিয়োগকারীর ৬৮ কোটি টাকার দাবি ডিএসইতে

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:৩২, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

মশিউর কেলেঙ্কারি: ৭ হাজার বিনিয়োগকারীর ৬৮ কোটি টাকার দাবি ডিএসইতে

জাল সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ও নগদ অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় মশিউর সিকিউরিটিজের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এখন পর্যন্ত ৬৮ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি পেয়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় আগে সংঘটিত এ আর্থিক জালিয়াতিতে মোট ৪৪ হাজার বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার বিনিয়োগকারী তাদের লিখিত দাবি জমা দিয়েছেন।

ডিএসইর উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জন ইতোমধ্যে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ফরম-১৬ জমা দিয়ে তাদের শেয়ার অন্য ব্রোকারেজ হাউসে স্থানান্তরের আবেদন করেছেন। ডিএসই ক্ষতিগ্রস্ত সব বিনিয়োগকারীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ দাবি জমা দিতে আহ্বান জানিয়ে আসছে।

তদন্তে জানা যায়, মশিউর সিকিউরিটিজ তাদের কনসোলিডেটেড কাস্টমার্স অ্যাকাউন্ট (সিসিএ) থেকে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে এবং ক্লায়েন্টদের শেয়ার বিক্রি করে আরও ৯২ কোটি ৩০ লাখ টাকা সরিয়ে নেয়। নকল ব্যাক-অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিনিয়োগের ভুয়া তথ্য দেখানো হতো, ফলে দীর্ঘ সময় ধরে গ্রাহকরা প্রতারণার বিষয়টি বুঝতেই পারেননি।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের তথ্য সংগ্রহ করছে ডিএসই এবং বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ সুরক্ষা তহবিলে থাকা অর্থের চেয়ে বেশি হওয়ায় প্রো-রাটা ভিত্তিতে দাবি নিষ্পত্তি করা হবে।

এই জালিয়াতি প্রকাশ পায় গত বছরের আগস্টে, যখন ডিএসই সিসিএতে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার ঘাটতি শনাক্ত করে। পরবর্তী তদন্তে দেখা যায়, শেয়ার ও নগদ মিলিয়ে প্রায় ১৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর জেরে গত ১৯ আগস্ট মশিউর সিকিউরিটিজের ট্রেডিং ও ডিপি লাইসেন্স স্থগিত করা হয় এবং প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, যা এখনও বহাল রয়েছে।

বিএসইসি জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ডিজিটাল জালিয়াতি ঠেকাতে সব ব্রোকারেজ হাউসকে অভিন্ন ও টেম্পার-প্রুফ ব্যাক-অফিস সফটওয়্যার ব্যবহারে বাধ্য করা হয়েছে। এদিকে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মশিউর সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ঘটনা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধাক্কা দিয়েছে। দ্রুত ও স্বচ্ছ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা না গেলে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।