শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বড় অংশ এখনো বাধ্যতামূলক নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) জানিয়েছে, নিয়ম না মানা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত ৩৬০টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ১৩৮টি নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে, অর্থাৎ প্রায় ৬২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এখনো এ নির্দেশনা মানেনি।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীতে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (আইক্যাব) আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বিএসইসি কমিশনার ফারজানা লালারুখ এসব তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, সময়সীমা বাড়িয়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া হলেও বেশিরভাগ কোম্পানি বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি।
২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল জারি করা গেজেট অনুযায়ী, প্রতিটি তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ২০২৫ সালের ২৯ এপ্রিলের মধ্যে অন্তত একজন নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়সীমা পূরণ না হওয়ায় পরে তা বাড়ানো হয়। তবুও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিশনার।
ফারজানা লালারুখ আরও বলেন, করপোরেট গভর্নেন্সে দীর্ঘদিনের নানা দুর্বলতা এখনো কাটেনি। অনেক প্রতিষ্ঠানে নিয়ম অনুযায়ী কোম্পানি সেক্রেটারি নেই, আবার কেউ কেউ অননুমোদিতভাবে সিএফওকে সেক্রেটারি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে—যা সম্পূর্ণ বেআইনি। “অননুমতি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাকবেঞ্চারের মতো আচরণ করছে। বিএসইসি আর বেবিসিটার নয়, আমরা প্রকৃত নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় যেতে চাই,”—বলেন তিনি।
আইক্যাব ও ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) যৌথভাবে আয়োজিত ‘অ্যাডভান্সিং ইনক্লুসিভ গভর্নেন্স–ইন্ডিপেনডেন্ট ডিরেক্টরশিপ’ শীর্ষক বৈঠকে আইক্যাব সভাপতি এনকে এ মোবিন, এফসিএ সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আইক্যাবের জেন্ডার ইনক্লুশন অ্যান্ড লিডারশিপ কমিটির চেয়ারম্যান জেরিন মাহমুদ হোসেন, এফসিএ।
বক্তারা বলেন, সামাজিক ও পারিবারিক কাঠামোর কারণে নারীর নেতৃত্বে অংশগ্রহণ এখনো সীমিত। বিশেষ করে পারিবারিক মালিকানার কোম্পানিগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের কার্যকর ভূমিকা বাধাগ্রস্ত হয়। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানে গভর্নেন্স শক্তিশালী, সেখানে স্বাধীন পরিচালকরা সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিএসইসি কমিশনার জানান, নারী স্বতন্ত্র পরিচালকদের একটি শক্তিশালী পুল গঠনে কাজ চলছে। যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা বাড়লে নিয়োগের কিছু শর্ত শিথিল করার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, বোর্ডে নারীর উপস্থিতি কেবল বৈচিত্র্যই নয়, বরং ভালো গভর্নেন্স, স্বচ্ছতা ও দীর্ঘমেয়াদি মুনাফা নিশ্চিত করে। গবেষণায়ও প্রমাণিত—বোর্ডে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কর্মক্ষমতা ও টেকসই প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী হয়।
আইক্যাব ও আইএফসি জানিয়েছে, নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ শুধু নিয়ম মানার বিষয় নয়; এটি করপোরেট খাতকে আরও দায়িত্বশীল ও ভবিষ্যতমুখী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেই লক্ষ্যেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা, পেশাজীবী সংগঠন ও করপোরেট নেতাদের সমন্বয়ে কাজ চলবে।
























