ঢাকা   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

চুয়াডাঙ্গায় অতি তাপপ্রবাহ, কাল তাপমাত্রা আরও বাড়ার শঙ্কা

চুয়াডাঙ্গায় অতি তাপপ্রবাহ, কাল তাপমাত্রা আরও বাড়ার শঙ্কা

চুয়াডাঙ্গা যেন রীতিমতো আগুনে পুড়ছে। টানা তৃতীয় দিনের মতো দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়। শনিবার বিকেল তিনটায় চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছুঁয়েছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমের দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। একই সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা মাত্র ২৩ শতাংশ থাকায় জনজীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামীকাল রোববার তাপমাত্রা আরও ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। ফলে চুয়াডাঙ্গাবাসীর গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা আরও প্রকট হতে পারে।

তীব্র এই গরমে শহরের রাস্তাঘাট ফাঁকা, মানুষ অনেকটাই ঘরবন্দী। কিন্তু খেটে খাওয়া মানুষের জন্য স্বস্তি নেই। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর মহাসড়কের আশপাশে খাদ্যগুদাম ও চাতালে কাজ করা হাজারো শ্রমিক প্রাণান্তকরভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রখর রোদের ভেতরেই।

দৌলাতদিয়াড় এলাকার একটি চাতালে কাজ করছিলেন ১৪ জন শ্রমিক। কেউ ধান শুকাচ্ছেন, কেউ বস্তা ভর্তি করছেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে পানি খেয়ে শরীর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছেন তাঁরা। শ্রমিক মিরাজুল ইসলাম বলেন, “সূর্যের তাপে গা-ডা পুড়ে যাচ্চে। সেদিকে তাকাইলেই মাথা ঘোরায়, কিন্তু কাজ থাইকা পারি না।”

আলুকদিয়ায় আরেক শ্রমিক রিংকু মিয়া জানান, “এক বস্তা ধান শুকায়ে গুদামে রাখলে ১৮ টাকা দ্যায়। এই টাকাতেই আমার পাঁচজনের সংসার চলে।” এমন গরমেও কাজ ছাড়া বিকল্প নেই বলেই জানান তাঁরা।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, আকাশ একেবারে পরিষ্কার, বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। পশ্চিমা গরম বাতাস প্রবাহের ফলে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, “আগামীকাল তাপমাত্রা আরও বাড়বে, তবে পরশু থেকে একটু কমতে পারে। তবে কয়েক দিন অস্বস্তিকর গরম থাকবে।”

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ৪২ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। চলতি মৌসুমে ২০০২ সালের পর এই মাত্রার উষ্ণতা খুব কমই দেখা গেছে। সর্বশেষ সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছিল ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল—৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রেকর্ড বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় সবচেয়ে বেশি গরম পড়ে এপ্রিল মাসে। গত ২৪ বছরে এপ্রিলেই ১৪ বার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

এই অস্বাভাবিক গরমে মানুষের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে। তাই চিকিৎসকেরা বলছেন, রোদে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলা, প্রচুর পানি পান এবং ঠান্ডা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করাই এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি।