ঢাকা   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

হীরামন মঞ্জিলের স্মৃতি, সংগীতে বেড়ে ওঠা আব্বাসীর শৈশব

হীরামন মঞ্জিলের স্মৃতি, সংগীতে বেড়ে ওঠা আব্বাসীর শৈশব

মুস্তাফা জামান আব্বাসীর শৈশব মানেই সংগীতময় এক সময়। সংগীত যেন রক্তে মিশে থাকা এক উত্তরাধিকার। তাঁর বাবা আব্বাসউদ্দীন ছিলেন বাংলার লোকসংগীতের অন্যতম অগ্রদূত। কুচবিহারে ধানখেতের আল ঘেঁষে শোনা গান তিনি তুলে এনেছিলেন শহরের অন্দরে, এমনকি পৌঁছে দিয়েছিলেন বিশ্বমঞ্চে। দেশভাগের পর পরিবারসহ ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন আব্বাসউদ্দীন। পল্টনে দাদির নামে গড়ে তোলেন 'হীরামন মঞ্জিল' নামের একটি বাড়ি, যা হয়ে ওঠে সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল।

কলকাতায় তাঁদের বাসা ছিল কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের আড্ডাস্থল, যা ঢাকাতেও অব্যাহত থাকে। নববর্ষে বাড়িতে গান-কবিতার জলসা বসত, যেখানে আব্বাসউদ্দীন কবিতা আবৃত্তি করতেন, সন্তানরা গাইতেন গান। এই আবহেই বেড়ে ওঠেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। স্কুলজীবনে ছিলেন মেধাবী ছাত্র, পড়তেন সেন্ট গ্রেগরিজে। গানের হাতেখড়ি হয় মাত্র সাত বছর বয়সে, বিখ্যাত ওস্তাদ কাদের জামিরির কাছে। বোন ফেরদৌসী রহমানও ছিলেন সহপাঠী। এরপর তালিম নেন আরও বহু ওস্তাদের কাছে, বাবার কাছ থেকেও শেখেন নিয়মিত।

শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও তাঁর রেকর্ড বেরিয়েছে। আধুনিক গান, গজল, হিন্দি ও উর্দু গানেও রেখেছেন অনন্য ছাপ। এমনকি মেহেদি হাসানের সঙ্গেও ছিল তাঁর ভালো সম্পর্ক। একসময় তাঁকেই পরামর্শ দিয়েছিলেন শুদ্ধ সংগীতে মনোযোগ দিতে। যদিও আব্বাসী সংগীতকে কখনো পেশা হিসেবে নেননি—তিনি সফল ব্যবসায়ীও। মতিঝিলে ছিল তাঁর অফিস। একসময় সরকার তাঁকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের দায়িত্ব দেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘বাঁশরী’ ও ‘হিজলতমাল’ অনুষ্ঠানে প্রায় ২৫ বছর সংগীত পরিবেশন করেন। দেশের নানা প্রান্ত থেকে寄আসা চিঠি আজও তিনি যত্নে রেখে দেন। কারণ, প্রতিটি চিঠিই তাঁর কাছে একেকটি অনুভবের দ্যুতি। তাঁর সংগীতজীবন শুধু ইতিহাস নয়, অনেকের জীবনের অংশও বটে।