ঢাকা   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

সাগরে ভেসে শেষযাত্রা, লাশ হয়ে ফিরল রিফাত

সাগরে ভেসে শেষযাত্রা, লাশ হয়ে ফিরল রিফাত

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের দেশ ইতালিতে পৌঁছাতে পারেননি মাদারীপুরের তরুণ রিফাত তালুকদার। বরং সাগরের নীল জলে ডুবে মৃত্যুর পর পাঁচ মাস ঘুরে অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন গ্রামের মাটিতে। শনিবার বিকেলে তাঁর মরদেহ পৌঁছায় মাদারীপুরের শিবচরের তালুকদারকান্দি গ্রামে। জানাজা শেষে দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে।

২৫ বছর বয়সী রিফাত ছিলেন ওই গ্রামের হুমায়ুন তালুকদারের একমাত্র ছেলে। পরিবারের স্বপ্ন বাস্তবায়নে গত বছরের অক্টোবর মাসে একটি দালালচক্রের মাধ্যমে তিনি পাড়ি জমান দুবাই হয়ে লিবিয়ায়। সেখানে দুই মাস অপেক্ষার পর ১৮ ডিসেম্বর সমুদ্রপথে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু দুঃস্বপ্ন হয়ে আসে সেই যাত্রা। পথেই নৌকার ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ডুবে যায় যানটি। গুরুতর আহত রিফাতকে উদ্ধার করে লিবিয়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও দুই দিন পর তিনি মারা যান।

নৌকায় ওঠার পর থেকেই রিফাতের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। উৎকণ্ঠায় থাকা পরিবার ৫ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে খোঁজ নিতে। এরপর ২৬ মার্চ লিবিয়ার একটি হাসপাতালের মর্গে রিফাতের মরদেহ শনাক্ত হয়। নানা প্রক্রিয়া শেষে সরকারি সহায়তায় দেশে ফেরত আনা হয় মরদেহ।

রিফাতের বাবা হুমায়ুন তালুকদার বলেন, “১৮ ডিসেম্বর ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল। তারপর থেকে শুধু প্রতীক্ষা। ভাবতাম বেঁচে আছে, একদিন ফিরে আসবে। এখন বুঝতেছি, সব শেষ।” রিফাতের মা শিল্পী বেগম একমাত্র ছেলের লাশ বুকে নিয়ে বারবার বলছিলেন, “আমার বাপজানকে ফিরাইয়া দাও।”

শিবচরের ইউএনও পারভীন খানম জানান, মরদেহ ফেরত আনতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। প্রয়োজনে পরিবারকে আরও সহায়তা দেওয়া হবে।

এই করুণ ঘটনায় আবারও সামনে এলো লিবিয়া-পথে মৃত্যুমিছিলের বাস্তবতা। স্বপ্নের সন্ধানে ঘর ছাড়ার আগে প্রতিটি পরিবার যেন আরেকবার ভাবে, সাগর পাড়ি মানেই বাঁচার নিশ্চয়তা নয়।