
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর। স্বাধীন বাংলাদেশের ’৭৫ পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক ও দূরদর্শী বলিষ্ঠ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭ তম জন্মদিন আজ। স্বাধীন বাংলাদেশের রুপকার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অসামান্য সব কাজের অবদানে বিশ্বজুড়ে আজ ব্যাপক সমাদৃত এবং সম্মানিত। বিশ্বের উচ্চ স্থানীয় বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ তাকে রোল মডেল মনে করেন।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বর্তমানে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে পালন করে রেকর্ড গড়েছেন তিনি। দেশের ইতিহাসে আর কারও এই রেকর্ড নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যে সাফল্য এসেছে আর কোনো নেতৃত্বে এমন সাফল্য দেখেনি দেশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্যে স্বনির্ভরতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো, যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন তিনি। পার্বত্য চুক্তি, ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তি, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়সহ জাতীয় জীবনের বহুক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে তারই আমলে।
তবে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপ ও মিয়ানমারে নৃশংসতার শিকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে যে মানবিকতার পরিচয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন তার ভূয়সী প্রশংসা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এখনও চলমান। বিশ্বজুড়ে এ কারণে তিনি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এবং সম্মানিত হয়ে আসছেন সবসময়।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভের পর বাংলাদেশের শাসনভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে যে শান্তি ও প্রগতির পররাষ্ট্রনীতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুসরণ করেছিলেন, তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনাও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে একই নীতি অনুসরণ করে এগিয়ে চলেছেন। ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’ বিশ্বশান্তির পক্ষে বঙ্গবন্ধুর এই অমোঘ নীতিই এখনো বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র।
আর এ কারণেই সময়ে সময়ে বিশ্বনেতারা তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা, দক্ষতা ও সুদূরপ্রসারি চিন্তা-চেতনার ফলেই বাংলাদেশে এত উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে এবং সব দিক থেকে দেশ উন্নতির শিখরে এগিয়ে যাচ্ছে বলে তারা মনে করেন। জাতিগত নিধন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ৬ লাখ ৯২ হাজার রোহিঙ্গা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে রোহিঙ্গা স্রোত জোরালো হওয়ার এক মাসের মাথায় মন্তব্য করেন, “আমরা ১৬ কোটি মানুষকে খাবার দেই। সুতরাং বিপদে পড়ে আমাদের দেশে আসা দুই-পাঁচ-সাত লাখ মানুষকে খাবার দেওয়ার ক্ষমতাও আমাদের আছে।"--এমন বক্তব্য রাখতে মন লাগে, বুকে ব্যাপক সাহস লাগে। অকুতোভয় দেশরত্ন আমাদের এই প্রধানমন্ত্রীর তা আছে।
বিভিন্ন বিশ্বনেতাদের প্রশংসাবাণী
বাংলাদেশের সমৃদ্ধির জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করে যুক্তরাজ্যের (ইউকে) প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একজন সফল অর্থনৈতিক নেতা হিসেবে অভিহিত করে ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, `আপনি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। আমি আপনাকে অনেক বছর ধরে অনুসরণ করছি। আপনি একজন সফল অর্থনৈতিক নেতা। আমার দুই মেয়ের জন্যেও আপনি মহান অনুপ্রেরণা’
পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, ভূমিহীন ও গৃহহীন বাংলাদেশের জনগণকে সরকারি খরচে বাড়ি দেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে শেখ হাসিনার গৌরবময় ভূমিকারও ভূয়সী প্রশংসা করেন ঋষি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার প্রশংসা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, "আমি আনন্দিত যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে তার সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। যারা বাংলাদেশ গঠনে আপত্তি করছিলেন, যারা এখানকার মানুষকে নিচু চোখে দেখতেন, যারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন, বাংলাদেশ তাদের ভুল প্রমাণ করছে।"
এছাড়া অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও শেখ হাসিনার উদ্দেশে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে পাঠানো এক বার্তায় বলেছিলেন, “আমি আপনাকে ও বাংলাদেশের জনগণকে এই অভূতপূর্ব অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানাই। আপনি ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন। এটি বিশ্বে উদারতা ও মানবতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র অংশীদার হিসেবে কাজ করবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলায়ও আমার প্রশাসন বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে।“
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, "সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দারুণ কিছু সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও উন্নয়নের দিকে মনোযোগী হয়েছে এবং দ্রুত বর্ধনশীল বিশ্বের কাতারে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে। ৬ শতাংশের অধিক জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) মাধ্যমে বাংলাদেশ তার দেশের মানুষের জীবনকে উন্নত করছে এবং বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। চীন বাংলাদেশের এমন উন্নয়নে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।"
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বলেন, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নেতা হিসেবে পেয়ে এই দেশের মানুষ সত্যিই ভাগ্যবান। আমার বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাকে নিয়ে গর্ববোধ করতেন। তিনি এবং তার দল যে দক্ষতার সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে। এই করোনার মাঝেও দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ জিডিপি বাংলাদেশের। এগুলো জেনে আমাদের সত্যিই আনন্দ অনুভূত হয়।"
এছাড়া কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, "বর্তমানে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নতি, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নতির মতো বিষয়গুলো এ দেশের মানুষের সামনে নতুন নতুন সম্ভাবনা এনে দিয়েছে।"
এদিকে শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে বলেছিলেন, "বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করেই বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে, বাংলাদেশকে সুখী ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন।"
বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, "বাংলাদেশ অগ্রগতি ও ক্রমাগত উন্নয়নের দিকে স্থিরভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মর্যাদা অর্জন করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার বাংলাদেশ।"
কয়েক বছর আগে টুইটারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী লেখেন, “সাহসিকতা ও ধৈর্যের সঙ্গে ব্যক্তিগত বেদনাকে পাশ কাটিয়ে তার নিজের বিশ্বাসের প্রতি অবিচল সংগ্রাম, আমার জন্য যেভাবে বড় অনুপ্রেরণার জায়গা ছিল তেমনি ভবিষ্যতেও আমায় অনুপ্রাণিত করে যাবে।“
সিয়েরা লিওনের প্রধানমন্ত্রী ও তার পত্নীও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। সিয়েরা লিওনের প্রধানমন্ত্রী ও তার পত্নী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বলেন, ‘আমরা আপনাকে (বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী) অনুসরণ করছি।“
এদিকে শুধু বিশ্বনেতারাই নন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতও প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনায় মুগ্ধ হয়ে নানা সময়ে নানা প্রশংসাবাণী দিয়েছেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, “আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার গত এক দশকে বাংলাদেশের পক্ষে যা অর্জন করেছে তা পুরোই ‘ব্যতিক্রমী’। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে এখনো দুদেশের সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহযোগিতার বড় সুযোগ রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।“
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, “গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার যে উন্নয়ন অর্জন করেছেন তা যে কোন তুলনায় অনন্য। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি অপরিবর্তিত এবং দুই দেশের সম্পর্কের শিকড় যে কোনো কৌশলগত অংশীদারিত্বকে ছাড়িয়ে যায়।“
বাংলাদেশে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দেশের অগ্রগতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে স্বীকৃত। জাতি হিসেবে টেকসই উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান বাঘ। রাষ্ট্রদূত তুরান প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারী মোকাবেলায় বাংলাদেশি জনগণের নমনীয়তারও প্রশংসা করেন।
শেয়ার বিজনেস24.কম