
শেয়ারবাজারে অনিয়ম, স্বচ্ছতা ঘাটতি ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। বেক্সিমকো গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানসহ মোট পাঁচটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে কমিশন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, শাইনপুকুর সিরামিকস, রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম) এবং নিউ লাইন ক্লোথিংস।
বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মুহাম্মদ জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাদের ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্তের আওতায় কোম্পানিগুলোর স্পন্সর-ডিরেক্টরদের যৌথ শেয়ার ধারণ, আর্থিক প্রতিবেদন জমা, বার্ষিক সাধারণ সভা (AGM) আয়োজন, এবং ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের সম্ভাবনা যাচাই করা হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশেষ নজরদারির মূল কারণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংশ্লিষ্টতা। বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালাম এফ রহমান ছিলেন আগের সরকারের সদস্য। পাশাপাশি গ্রুপটির কোম্পানিগুলো বড় সূচকে অবস্থান করায় তাদের শেয়ারের পতনে পুরো বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
অর্থনৈতিক তথ্য বলছে, বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যাংকঋণের পরিমাণ ৪ হাজার বিলিয়ন টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যার বড় অংশই পরিণত হয়েছে মন্দ ঋণে। তাদের অধীন শাইনপুকুর সিরামিকসের স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৯৪ মিলিয়ন টাকা। অন্যদিকে, নিউ লাইন ক্লোথিংস ২০২১ সালের পর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি, এমনকি সাম্প্রতিক এক পরিদর্শনে কোম্পানিটিকে বন্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে।
রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলসও রয়েছে আলোচনায়। কোম্পানিটির স্পন্সর-ডিরেক্টরদের যৌথ শেয়ার ৩০ শতাংশের নিচে চলে এসেছে, এবং ২০১৭ সাল থেকে মুনাফা কমতে কমতে ২০২১ সালে এসে ৩৭৯ মিলিয়ন টাকার লোকসান দাঁড়ায়। এরপর আর কোনো হালনাগাদ আর্থিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
এই প্রেক্ষাপটে বিএসইসি সম্প্রতি নতুন নির্দেশনা দিয়েছে—যেসব কোম্পানির স্পন্সর-ডিরেক্টরদের সম্মিলিত শেয়ার ৩০ শতাংশের নিচে, তাদের স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে। একই নিয়ম ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর জন্যও প্রযোজ্য।
পরামর্শ ও বিশ্লেষণ:
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও নিয়মতান্ত্রিকতার চর্চা নিশ্চিত করা এখন জরুরি। বিএসইসি’র এই পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হলেও শুধু তদন্ত নয়, তদন্ত-পরবর্তী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণও সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে কোম্পানি সাসপেনশন, স্পন্সরদের জরিমানা বা পুনর্গঠন উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে প্রভাবশালী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা উপেক্ষা করে আইনপ্রয়োগ নিশ্চিত করতে না পারলে বাজারে বারবার একই অনিয়ম ফিরে আসবে।