
দেশের শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি দুর্বল ইসলামি ব্যাংককে একীভূত করে একটি বড় ইসলামি ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলধন সংকটে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংককে মিলিয়ে এই নতুন ব্যাংকের জন্ম হবে। সরকার ও বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নে ব্যাংকটির যাত্রা শুরু হবে এবং এর মূল লক্ষ্য হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে (SME) অর্থায়ন জোরদার করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়া ঈদের ছুটির পরই শুরু হবে এবং আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে প্রথম ধাপের কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর সম্পদ ও দায় হস্তান্তরের পাশাপাশি খেলাপি ঋণগুলোর একটি বড় অংশ ‘সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি’র (AMC) কাছে স্থানান্তর করা হবে যাতে নতুন ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে থাকে।
প্রাথমিক পর্যায়ে গ্রাহকদের লেনদেনে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না এবং তাঁরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন ব্যাংকের আওতায় চলে আসবেন। একইসঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি নিরাপদ থাকবে, অন্তত একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত। তবে ধীরে ধীরে শাখা সংখ্যা ও জনবল পুনর্বিন্যাস করা হবে। সারা দেশে পাঁচ ব্যাংকের ৭৭৯টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা ও প্রায় ১৫ হাজার জনবল রয়েছে, যাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন ব্যাংকের নীতিনির্ধারকরা স্পষ্ট পরিকল্পনা দিতে শুরু করেছেন।
প্রক্রিয়াটি ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫-এর অধীনে বাস্তবায়ন হবে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের শেয়ার ছাড়ার মাধ্যমে নতুন ব্যাংকটির পরিচালনায় যুক্ত করা হবে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, শুধু একীভূত করলেই সংকটের সমাধান আসবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব ও লুটপাটের সংস্কৃতি দূর না হলে ব্যাংক খাতে কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না। তাই এই উদ্যোগের সফলতার জন্য সুশাসন, জবাবদিহি এবং যোগ্য নেতৃত্ব নিশ্চিত করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।
পরামর্শ:
এই গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর যেন আরেকটি ব্যর্থ সংস্থায় পরিণত না হয়, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ, সময়োপযোগী এবং কঠোর নজরদারির আওতায় পরিচালনা করা। একইসঙ্গে নতুন ব্যাংক পরিচালনায় অরাজনৈতিক, পেশাদার, এবং অভিজ্ঞ নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে বৃহৎ ইসলামি ব্যাংকের সম্ভাবনা বরং আর্থিক খাতের আরও বড় ঝুঁকিতে রূপ নিতে পারে।