ঢাকা   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আট মাসে কী করল বিডা? আশিক চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে ‘আমলনামা’ প্রকাশ

আট মাসে কী করল বিডা? আশিক চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে ‘আমলনামা’ প্রকাশ

বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ নিয়ে আলোচনা এখন সরগরম। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় দেশে আসা বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক নেতারাও। এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী) এক বিস্তৃত বিবরণ প্রকাশ করেছেন—নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে।

স্ট্যাটাসে তিনি জানিয়েছেন, বিডা ও বেজার দায়িত্ব নেওয়ার পর আট মাসে কী কী কাজ হয়েছে, কী অগ্রগতি হয়েছে, আর কোথায় পিছিয়ে আছে। এর পাশাপাশি গঠনমূলক সমালোচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন—তথ্য যাচাই করে নিন, বিভ্রান্ত হবেন না।

আশিক চৌধুরী জানান, বিডার কাজ মূলত তিনটি মূল খাতে—
(ক) বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির উদ্যোগ
(খ) বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধান
(গ) নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণে শক্তিশালী পাইপলাইন গঠন


(ক) বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গঠনে গৃহীত উদ্যোগ

দুই শতাধিক দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তার মতামতের ভিত্তিতে ৩০টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে:

  • ১৮টি পদক্ষেপ এগিয়ে আছে,

  • ৭টি অন ট্র্যাকে,

  • ৫টি পরিকল্পনা অনুযায়ী পিছিয়ে।

উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি:

  • ইকোনমিক জোনে ফোকাস, প্রতিটি জোনে বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ পরিকাঠামো উন্নয়ন

  • ওয়ান স্টপ সার্ভিসে সময় ও সেবার হিসাব প্রকাশ

  • সেমিকন্ডাক্টর টাস্কফোর্স গঠন

  • বিদেশি ঋণ গ্রহণ প্রক্রিয়ার উন্নয়ন

  • ব্যবসা শুরুর স্টার্টার প্যাক

  • ইনভেস্টমেন্ট সামিট, প্রোমোশনাল ক্যাম্পেইন

  • পোর্ট স্ট্র্যাটেজি ও ফ্রি ট্রেড জোন পরিকল্পনা

যা এখনো পিছিয়ে:

  • প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইসরি কাউন্সিল

  • ক্যাপিটাল রিপেট্রিয়েশন ও ট্যাক্স রুল সংস্কার

  • বিডার সাংগঠনিক কাঠামো ও এনার্জি সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি


(খ) পুরনো বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধান

বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বর্তমান বিনিয়োগকারীদের অভিজ্ঞতা।

  • ইয়ংওয়ান, মেটলাইফ, শেভ্রন, লাফার্জসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের সমস্যার সমাধান

  • পলিসি অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে ইনসেনটিভ, লাইসেন্সিং, ডিউটি সংস্কারে পদক্ষেপ

  • জনবল সীমিত থাকায় এখনও অনেকেই অপেক্ষায়


(গ) নতুন বিনিয়োগের ‘পাইপলাইন’ ও সামিট

বিডা জানিয়েছে, আগে বিনিয়োগকারীদের আগমনে কোনো কাঠামোগত ট্র্যাকিং হতো না। এখন ২টি ইনভেস্টমেন্ট সামিটের মাধ্যমে নতুন ধারার সূচনা হয়েছে।

  • ৬৭৫ জন বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করেছেন

  • তিন শতাধিক দ্বিপাক্ষিক মিটিং হয়েছে

  • ৩টি প্রকল্প চূড়ান্ত: গার্মেন্টস, এয়ারলাইন্স অ্যামেনিটি, ঘড়ি নির্মাণ

  • সম্ভাব্য আরও ১৫টি প্রকল্প

প্রত্যাশা নয়, বাস্তবতা:
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, এক দিনে বিলিয়ন ডলারের চেক আসে না। তবে বড় অস্থিরতা কাটিয়ে গত বছরের তুলনায় বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ একই থাকা ইতিবাচক বার্তা দেয়।


আশিক চৌধুরী স্পষ্টভাবে বলেছেন, কেউ যেন বিভ্রান্তিকর তথ্য না নেয়। ভেরিফায়েড তথ্য গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে জানান, কাজ হচ্ছে, তবে আরও অনেক কিছু করার আছে। বিডার ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব যেন শূন্য থেকে শুরু করতে না হয়, সে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

"আমরা বাহবা চাই না, গঠনমূলক সমালোচনা চাই। অ্যাকাউন্টেবল রাখুন আমাদের।" — আশিক চৌধুরী


এই ‘আমলনামা’ একদিকে বিডার কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছ চিত্র উপস্থাপন করে, অন্যদিকে বিনিয়োগবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে একটি উদ্দীপনামূলক বার্তা দেয়।