ঢাকা   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার রূপরেখা এনসিপির খসড়া গঠনতন্ত্রে

‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার রূপরেখা এনসিপির খসড়া গঠনতন্ত্রে

গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও বিকেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থার ভিত্তিতে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্য এনসিপির খসড়া গঠনতন্ত্রে উঠে এসেছে। দলটি মনে করে, ১৯৪৭ সালের রাজনৈতিক আত্মপ্রতিষ্ঠা, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান—এই তিন অধ্যায়ের মিলনেই সৃষ্টি হতে পারে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বনির্ভর রাষ্ট্র।

দলের খসড়া গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, জনগণ বারবার রক্ত দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে, কিন্তু এখনো মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা—গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে জনগণ শুধু একটি সরকারের পতনের জন্য নয়, বরং ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে জীবন দিয়েছে।

দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে শীর্ষ নেতৃত্বে মেয়াদের সীমা বেঁধে দিয়েছে এনসিপি। কেউ তিন মেয়াদের বেশি দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না এবং প্রতি তিন বছর পরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে। দলের সর্বোচ্চ ফোরাম ‘রাজনৈতিক পরিষদ’-ও হবে নির্বাচিত। প্রয়োজনে দলের শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধেও তদন্ত প্রক্রিয়া চালু করতে পারবে জাতীয় পরিষদের সদস্যরা।

এনসিপির কাঙ্ক্ষিত ‘নতুন বাংলাদেশ’ হবে এমন এক রাষ্ট্র, যেখানে থাকবে শক্তিশালী ও জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র, বাক্‌স্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও সংগঠনের স্বাধীনতা। দলটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর করে সবার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে চায়।

নারী, শিশু, কৃষক, শ্রমিক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে দলটি বিশেষভাবে কাজ করার কথা বলেছে খসড়া গঠনতন্ত্রে। তারা শিক্ষা ব্যবস্থায় উদ্ভাবন ও কর্মসংস্থানমুখী সংস্কারের পাশাপাশি কৃষি ও প্রযুক্তিনির্ভর টেকসই অর্থনীতি গড়ার পরিকল্পনা করছে।

সরকারে গেলে দল ও সরকারের মধ্যে পার্থক্য বজায় রাখতে দলীয় প্রধানকে সরকারপ্রধান হলে দলীয় পদ ছাড়তে হবে। এ ছাড়া ওয়েস্টমিনস্টার মডেলে ছায়া মন্ত্রিসভা (শ্যাডো ক্যাবিনেট) গঠন করে নীতিপর্যায়ে বিকল্প প্রস্তাব ও বিশ্লেষণ উপস্থাপন করবে এনসিপি।

জানা গেছে, ২২ জুন নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদনের আগে খসড়া গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করতে দলের সাধারণ সভায় আলোচনা হবে। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্র নিয়ে দলের অভ্যন্তরে ইতোমধ্যে বিস্তর আলোচনা হয়েছে।

এনসিপি একটি অংশগ্রহণমূলক, দুর্নীতিমুক্ত এবং স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়, যেখানে সকল নাগরিকের অধিকার ও সম্ভাবনার সমান সুযোগ থাকবে—এটাই তাদের নতুন রাজনৈতিক দিশা।