ঢাকা   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

 এপ্রিলেই জাতীয় নির্বাচন: ‘তিন ম্যান্ডেট’ বাস্তবায়নে অটল প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

 এপ্রিলেই জাতীয় নির্বাচন: ‘তিন ম্যান্ডেট’ বাস্তবায়নে অটল প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো দিনে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার সন্ধ্যায় দেওয়া ওই ভাষণে তিনি বলেন, চলমান বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের তিনটি ম্যান্ডেট বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, এই ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন শিগগিরই নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করবে। তিনি বিশ্বাস করেন, আগামী রোজার ঈদের মধ্যেই বিচার ও সংস্কার প্রশ্নে একটি গ্রহণযোগ্য অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে বিচার কার্যক্রমে অগ্রগতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

স্বাধীনতার পর বারবার ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন দেশকে সংকটে ফেলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন নির্বাচন যারা আয়োজন করে, তারা জাতির কাছে অপরাধী; আর যারা এতে ক্ষমতায় আসে, তারা জনগণের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য একটি অবাধ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার অপরিহার্য বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী জুলাই মাসে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘জুলাই সনদ’ উপস্থাপন করা সম্ভব হবে। এই সনদে জনকল্যাণমুখী সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার থাকবে, যেগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে।

ভাষণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, সীমান্ত নিরাপত্তা, রাখাইনের জন্য করিডর নিয়ে অপপ্রচারের বিষয়ে ‍তিনি সাফ জানিয়ে দেন, বাংলাদেশ কোনো করিডর দেয়নি। তিনি বলেন, এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে কিছু মহল। জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রস্তাব এখনও আলোচনার পর্যায়েই রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনটি ম্যান্ডেট—বিচার ও জবাবদিহি, গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন—এই তিনটি হচ্ছে জাতির সঙ্গে সরকারের চুক্তি। এই চুক্তির আওতায় বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে গুম, খুন, নির্যাতন ও আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত এবং বিচার। বিশেষ করে জুলাই হত্যাযজ্ঞের বিচার শুরু হয়েছে এবং তা সম্প্রচারিত হচ্ছে সরাসরি কিংবা রেকর্ডকৃতভাবে, যা ইতিহাসে প্রথম।

তিনি জানান, বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে আগের সরকারের ব্যক্তিরা প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। যদিও তদন্তকারীরা ডিজিটাল ও প্রযুক্তিনির্ভরভাবে এসব রিকভার করছেন।

গুম ইস্যুতে একটি স্বাধীন কমিশন কাজ করছে এবং নতুন আইন প্রণয়ন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। ঢাকা, বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন গুমকেন্দ্র পরিদর্শন, গণশুনানি এবং সাক্ষ্যগ্রহণে বিপুল মানুষ অংশ নিয়েছেন। দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার এত বিস্তৃতভাবে গুম তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অর্থনৈতিক অগ্রগতি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত ছয় মাসে ৭৫৬ মিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। ৩০টি সংস্কারকাজের মধ্যে ১৮টি ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। চীনের ১০০ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। চীন, কাতার ও জাপান সফরে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার বিষয়ে কাতারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরকে ‘অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এটিকে শক্তিশালী করতে হলে আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন, যারা বিশ্বজুড়ে সফলভাবে বন্দর পরিচালনা করে। বন্দর উন্নয়ন হলে শুধু বাংলাদেশ নয়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও উপকৃত হবে।

তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদ ও তাদের দেশি-বিদেশি দোসররা অপপ্রচারে লিপ্ত হয়ে অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে চায়। কিন্তু তিনি দেশবাসীকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

সবশেষে তিনি আবারও সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা ও সালাম জানিয়ে ভাষণ শেষ করেন।