
কোরবানির ঈদ ঘিরে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বাড়তে থাকায় দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে ফিরেছে চাঙাভাব। চলতি অর্থবছরের (২০২৩–২৪) প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, জুন মাসের প্রথম ৩ দিনেই এসেছে ৬০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স। টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার ৪২৯ কোটি (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরে)। মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার এবং মার্চে—রমজানের ঈদ উপলক্ষে—এসেছিল ৩২৯ কোটি ডলার, যা ছিল এক বছরে সর্বোচ্চ।
প্রবাসী আয় বৃদ্ধির প্রভাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ইতিবাচক ধারায় ফিরছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার, যদিও আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি (বিপিএম-৬) অনুসারে তা ২০ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অবৈধ হুন্ডি রোধে সরকারের কঠোরতা, প্রণোদনা ও উৎসাহমূলক নীতিমালা প্রবাসী আয় বাড়াতে বড় ভূমিকা রেখেছে। বড় ধর্মীয় উৎসবগুলো সামনে রেখে প্রবাসীরা স্বজনদের জন্য বাড়তি টাকা পাঠান—এটিও গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত আগস্ট থেকে প্রতি মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসছে। ফেব্রুয়ারিতে আসে ২৫৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। জানুয়ারিতেও ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে ডলার সংকট অনেকটাই কেটে যাচ্ছে। এখন ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যেই ডলার কিনছে, যদিও খোলাবাজারে তা ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রবাসী আয় হচ্ছে দেশের একমাত্র দায়বিহীন বৈদেশিক মুদ্রার উৎস। এর বিপরীতে কোনো আমদানি খরচ বা দায় পরিশোধ করতে হয় না। ফলে রেমিট্যান্স বাড়লে সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভও বাড়ে। অর্থনীতির জন্য এই ধারা ইতিবাচক বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকেরা।
ব্যাংকাররা আশা করছেন, ঈদুল আজহা সামনে রেখে জুন মাসজুড়েই রেমিট্যান্সের এ প্রবণতা অব্যাহত থাকবে, যা দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি নিয়ে আসবে।