ঢাকা   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেয়ারবাজারে আস্থা ফেরাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চায় বিনিয়োগকারীরা

শেয়ারবাজারে আস্থা ফেরাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চায় বিনিয়োগকারীরা

স্থবির ও মন্দার মুখে থাকা দেশের শেয়ারবাজারে আবারও গতি ফেরাতে এবং বিনিয়োগকারীদের হারানো আস্থা পুনরুদ্ধারে অপ্রদর্শিত অর্থ—যাকে সাধারণভাবে কালো টাকা বলা হয়—বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার দাবি উঠেছে। বুধবার (৪ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনের সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের প্রধান শেয়ারসূচক পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। একই সময়ে বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। দৈনিক লেনদেন ৩০০ কোটির নিচে নেমে আসায় বাজারে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে, যা বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা দিয়েছে। তার ভাষায়, “এটি শুধু বাজার সংশোধন নয়, বরং একটি কাঠামোগত সংকট। উত্তরণের জন্য জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।”

এই প্রেক্ষাপটে ইকবাল হোসেন প্রস্তাব করেন, কালো টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হোক, তবে এর সঙ্গে তিন বছরের লক-ইন পিরিয়ড বাধ্যতামূলক করা হোক। অর্থাৎ, বিনিয়োগকারীরা ওই সময়ের মধ্যে মূলধন তুলতে পারবেন না, কেবল ডিভিডেন্ড আয় নিতে পারবেন। তার মতে, এই ব্যবস্থায় বাজারে তারল্য বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে।

সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রসঙ্গও উঠে আসে। তিনি বলেন, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। যেমন, মূলধন লাভের ওপর কর প্রত্যাহার বা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ড আয়ে করমুক্তির মতো কোনো সুবিধা বাজেটে রাখা হয়নি। তবে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২০ শতাংশ নির্ধারণ করে কিছুটা স্বস্তি দেওয়া হলেও, ১০ শতাংশ কর ব্যবধানের জায়গায় বাস্তবে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭.৫ শতাংশ, যা প্রত্যাশার তুলনায় কম।

এছাড়া, মার্চেন্ট ব্যাংকের জন্য করহার ৩৭.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হলেও, তা মূলত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সুবিধাজনক। অন্যদিকে, ব্রোকারেজ লেনদেনে উৎসে কর ০.০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০৩ শতাংশ করা হলেও তা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে না বলে তিনি মনে করেন।

সবশেষে ইকবাল হোসেন বলেন, “বাজেটে কিছু সমন্বয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা তেমন কোনো প্রতিফলন পাচ্ছেন না।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সরকার যদি বিনিয়োগকারীদের এই দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে, তাহলে শেয়ারবাজারে একটি ইতিবাচক মোড় আসবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে।