
কোরবানির পশু জবাইয়ের সময় নির্ধারণ ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এটি নির্দিষ্ট দিন ও সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়, যা হজ ও ঈদুল আজহার তাৎপর্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।
ইসলামি ফিকহবিদ শাইখ সাইয়্যেদ সাবিক তাঁর গ্রন্থ ফিকহুস সুন্নাহ-তে উল্লেখ করেছেন, কোরবানির নির্ধারিত সময় হলো জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত। ঈদের দিন, অর্থাৎ ১০ জিলহজ, কোরবানির প্রধান দিন। এরপর আরও তিন দিন—১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ—তাশরিকের দিন হিসেবে গণ্য হয়, যেগুলোতেও কোরবানি জবাই করা বৈধ।
হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তাশরিকের সব দিনই জবাইয়ের দিন” (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ১৯৪১৬)। অর্থাৎ, এই চার দিনের যে কোনো দিন কোরবানি করা যায়।
তবে সময়ের একটা নির্দিষ্টতা রয়েছে। কোরবানির সময় শুরু হয় ঈদুল আজহার নামাজ ও খুতবা শেষ হওয়ার পর। নামাজের আগে জবাই করা শরিয়াহসম্মত নয়। নবী করিম (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি নামাজের আগে জবাই করে, সে কেবল নিজের জন্য মাংস জবাই করেছে। আর যে নামাজের পর জবাই করে, সে আমাদের রীতি পূর্ণ করেছে” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৫৫৬)। সময়ের শেষ সীমা হলো ১৩ জিলহজের সূর্যাস্ত।
যদি কেউ এই সময়ের মধ্যে কোরবানি না করতে পারেন, তবে ফিকহ অনুযায়ী মতভেদ রয়েছে। শাফেয়ি মতে, পরে কাজা হিসেবে কোরবানি করা যায়। তবে হানাফি, মালিকি ও হানবালি মতে, নির্ধারিত দিনগুলোতেই কোরবানি করা আবশ্যক। তা না পারলে পশুটি সদকা করতে হবে, তবে কোরবানির সওয়াব মিলবে না।
কোরবানি শুধু একটি ইবাদত নয়, এটি হজের অংশ, ঈদের আত্মত্যাগের বার্তা এবং আল্লাহর নির্ধারিত বিধান পালনের অনন্য প্রকাশ। তাই সঠিক সময়ে কোরবানি জবাই করা এই ইবাদতের মর্যাদা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার অপরিহার্য অংশ।