ঢাকা   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঈদুল আজহায় করণীয় ও বর্জনীয়: কোরবানির উৎসব হোক ঈমানদীপ্ত ও পরিচ্ছন্ন

ধর্ম

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৩:০২, ৬ জুন ২০২৫

ঈদুল আজহায় করণীয় ও বর্জনীয়: কোরবানির উৎসব হোক ঈমানদীপ্ত ও পরিচ্ছন্ন

কোরবানি—শুধু পশু জবাই নয়, বরং তা আত্মত্যাগ, ত্যাগের মহিমা এবং আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসার এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ। ঈদুল আজহার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুই দিন পর্যন্ত, নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে প্রতিটি মুসলমানের জন্য কোরবানি ওয়াজিব। তবে এই মহা উৎসবের রয়েছে কিছু করণীয় ও বর্জনীয়, যা জানলে আমাদের ঈদ হবে আরও পূর্ণতা ও পরিশুদ্ধতায় ভরা।

 ঈদুল আজহায় করণীয়

ঈদের সালাত ও প্রস্তুতি: ঈদের দিনের সূচনা হোক সুন্নতের মাধ্যমে—গোসল, সুন্দর পোশাক, সুগন্ধি ব্যবহার এবং মুখে Takbir পাঠ করে ঈদগাহে রওনা হওয়া। রাসুল (সা.) ঈদের নামাজের আগে কিছু খেতেন না এবং এক পথ দিয়ে যেতেন, অন্য পথ দিয়ে ফিরতেন। (বুখারি ৯৮৬)

কোরবানি—ঈদের আসল আমল: ঈদের নামাজের পরেই কোরবানি করা উত্তম। কোরবানির সময় ১০ জিলহজ ঈদের নামাজের পর থেকে শুরু হয়ে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত স্থায়ী। দিনে কোরবানি করা উত্তম হলেও রাতেও করা বৈধ।

গোশত বণ্টন: কোরবানির মাংস তিনভাগে ভাগ করুন—নিজের পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও গরিব-মিসকিন। এভাবে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিন সমাজে।

পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন: পশুর রক্ত ও বর্জ্য নির্ধারিত স্থানে ফেলা, পরিবেশ দূষণ রোধ করা—এই সময়ের জরুরি দায়িত্ব। রাসুল (সা.) অন্যকে কষ্ট দেয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।

তাকবির পাঠ: ঈদের আগের দিন (৯ জিলহজ) ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রতিটি ফরজ নামাজের পর তাকবির পাঠ করা সুন্নত। (ফাতহুল বারি ২/৫৮৯)

ঈদী শুভেচ্ছা ও সৌহার্দ্য: হাসিমুখে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো, সালাম ও মুসাফাহা করা সুন্নত। সাহাবায়ে কিরাম বলতেন, “তাকব্বালাল্লাহু মিননা ওয়া মিনকুম”

 ঈদুল আজহায় বর্জনীয়

ঈদের দিন রোজা: ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। এটি রাসুল (সা.) নিষিদ্ধ করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস ২৪১১)

বর্জ্য দিয়ে পরিবেশ নোংরা করা: রাস্তায় পশুর রক্ত, হাড়, ময়লা ফেলা যেমন গুনাহ, তেমনি মানুষের কষ্টের কারণও।

ঈদের সালাত ত্যাগ: অনেকে খাবার ও পোশাকের ব্যস্ততায় ঈদের নামাজ আদায় না করে ফেলে। অথচ এই সালাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ ও বিশেষ ফজিলতের অধিকারী।

বিদআত কাজ থেকে বিরত থাকুন: ঈদ উপলক্ষে গান-বাজনা, অবাধ মেলামেশা, ঈদকে কেন্দ্র করে কবর জিয়ারতের নতুন রেওয়াজ চালু করা—এসব বিদআত ও গুনাহের কাজ।

কোরবানির গোশত বা চামড়া বিক্রি নিষেধ: কোরবানির কোনো অংশ বিক্রি করে উপকার নেয়া হারাম। কসাইকেও পারিশ্রমিক হিসেবে গোশত দেয়া যাবে না; হাদিয়া হিসেবে দিলে অসুবিধা নেই। (বুখারি ১৭১৭)


ঈদ মানেই আনন্দ, কিন্তু সেই আনন্দ যেন হয় আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক। আমাদের ঈদ হোক তাকওয়ার আলোয় উদ্ভাসিত, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে পরিপূর্ণ, আর কোরবানির মাধ্যমে হোক আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের বাস্তব বহিঃপ্রকাশ। কোরবানির এই পবিত্র সময় যেন আমাদের অন্তরকে করে তোলে আরও বিনয়ী, উদার ও আল্লাহমুখী—এই দোয়াই করি।

আল্লাহ আমাদের কোরবানি কবুল করুন। আমিন।