ঢাকা   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও তাকওয়ার প্রতীক কোরবানি

ধর্ম

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৮:৪৩, ৩ জুন ২০২৫

আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও তাকওয়ার প্রতীক কোরবানি

কোরবানি ইসলামে কেবল পশু জবাইয়ের আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এক গভীর আত্মত্যাগ, খালেস নিয়ত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ইবাদত। এটি তাকওয়া, ইখলাস এবং আত্মশুদ্ধির এক চিরন্তন প্রতীক। ঈমান আত্মার, নামাজ-রোজা শরীরের, জাকাত সম্পদের, জিহাদ সময়-মেধার এবং আল্লাহর পথে যুদ্ধ জীবনের কোরবানি। এই ত্যাগের শিক্ষা নিয়েই মুসলমানরা পালন করে কোরবানি।

ইসলামের আগে অনেক আসমানি ধর্মেও কোরবানির বিধান ছিল, যার প্রমাণ মেলে আদম (আ.)-এর পুত্রদের কোরবানির কাহিনিতে। তবে ইসলাম এই বিধানকে দিয়েছে সর্বজনীনতা। যেমন—ইসলামে কোরবানি শুধু নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিশ্বজুড়ে যেকোনো মুসলমান তা আদায় করতে পারে। পূর্ববর্তী শরিয়তগুলোর মতো কেবল ধর্মযাজকরাই কোরবানি করত না, বরং ইসলাম প্রত্যেক মুসলমানকে নিজ হাতে কোরবানি করার সুযোগ দিয়েছে। রাসুল (সা.) নিজ হাতে পশু জবাই করেছেন এবং সাহাবাদেরও তা করতে উৎসাহিত করেছেন।

ইসলাম আগের ধর্মগুলোর বাহ্যিকতা ও অলৌকিকতাকে ছাড়িয়ে নিয়তের বিশুদ্ধতাকে করেছে মুখ্য। কোরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে—‘আল্লাহর কাছে পশুর গোশত বা রক্ত নয়, পৌঁছে যায় তোমাদের তাকওয়া।’ ইসলাম কোরবানিকে নিষ্প্রাণ দান নয়, বরং ইবাদত, সমাজকল্যাণ ও মানবিক সহানুভূতির মেলবন্ধন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।

ইসলামে কোরবানির গোশত নিজে খাওয়ার, পরিবার ও গরিবদের মধ্যে বণ্টনের সুযোগ রয়েছে। এটি শুধুই শরিয়তি নির্দেশ নয়, বরং এক ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা, দারিদ্র্য বিমোচন ও সাম্যবোধের প্রতীক।

জাতীয় উন্নয়নের দিক থেকেও কোরবানি এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কোনো জাতি আত্মত্যাগ ছাড়া উন্নত হতে পারে না। তাই কোরবানি কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি জাতিকে আত্মিক ও নৈতিকভাবে প্রস্তুত রাখার সাধনা।

মোটকথা, ইসলামে কোরবানি হলো আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ, ইমানের প্রমাণ এবং সামাজিক সহমর্মিতার এক মহান প্রশিক্ষণ।