
বিশ্বের প্রধান ধর্মগুলোতে অতিথি বা মেহমানের সম্মান ও সেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হিসেবে বিবেচিত। মানুষের সামাজিক ও মানবিক আচরণের অংশ হিসেবে হাজার বছর ধরে আতিথেয়তার ঐতিহ্য চালু রয়েছে। শুধু ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার কারণে নয়, মানবিক সম্পর্কের গুণগত মান উন্নয়নের জন্যও অতিথি আপ্যায়ন অপরিহার্য।
ইসলামে আতিথেয়তা একটি নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। পবিত্র কোরআনে অতিথির সম্মান ও সেবা নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস থাকলে মেহমানের সম্মান করা ইমানের অংশ। তিন দিন পর্যন্ত অতিথি আপ্যায়ন করা সুন্নত, এরপর তা সদকার সমতুল্য। এছাড়া মেহমানের প্রতি সদয় আচরণ, হাসিখুশি চেহারা এবং নিজ হাতে আপ্যায়ন করা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
সনাতন ধর্মে অতিথিকে দেবতার সমান শ্রদ্ধা ও সম্মান দেয়া হয়। বেদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে অতিথি দেবতুল্য। অতিথির জন্য খাবার, বসার ব্যবস্থা এবং সুন্দর আচরণ নিশ্চিত করা প্রত্যেক গৃহকর্তার দায়িত্ব। ভারতীয় সংস্কৃতিতে অতিথিকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ এবং উৎসব অনুষ্ঠানে পূজা ও আপ্যায়ন ঐতিহ্যের অংশ।
খ্রিষ্টধর্মেও অতিথি সেবাকে মহান গুণাবলি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাইবেলে উল্লেখ আছে, ভালোবাসার মূলে রয়েছে দরিদ্র ও গৃহহীনকে সহায়তা করা। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ে অতিথি আপ্যায়ন সামাজিক বন্ধন গড়ার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। নিয়মিত ভোজের আয়োজন ও প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ দিয়ে স্নেহ-আতিথেয়তা প্রকাশ করা হয়।
ইহুদি ধর্মেও অতিথিকে সম্মান দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিকতা। তালমুদে বলা হয়েছে, অতিথিকে হাসিখুশি চেহারা দিয়ে স্বাগত জানাতে হবে এবং গৃহহীন ক্ষুধার্তদের আশ্রয় ও সেবা নিশ্চিত করতে হবে। ইহুদি সমাজে রাত যাপনের স্থান নিশ্চিত করা একটি ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে বিবেচিত।
অতিথিসেবা কেবল ধর্মীয় নির্দেশ নয়, বরং এটি মানবিক সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে তোলার ও সামাজিক ঐক্যবদ্ধতার প্রতীক। বিশ্বজুড়ে নানা সংস্কৃতি ও ধর্মে অতিথি সম্মান করার এই গুণাবলি মানুষের সর্বোত্তম চরিত্রের পরিচায়ক। তাই আতিথেয়তা ও অতিথিপরায়ণতা মানবীয় সৌন্দর্যের এক অভাবনীয় রূপ।