
ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তার সহজতা ও ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি। কোরআনের ভাষায়, মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহ ‘মধ্যপন্থী জাতি’ হিসেবে গড়ে তুলেছেন যেন তারা মানবজাতির সামনে একটি ন্যায়পরায়ণ ও আদর্শ রূপে দাঁড়াতে পারে (সূরা বাকারা: ১৪৩)। মধ্যপন্থা মানে শুধু পরিমিতিবোধ নয়, বরং ন্যায়, ভারসাম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয়।
নবীজি (সা.)-এর জীবনে মধ্যপন্থার অসাধারণ দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। তিন সাহাবি যখন কঠোর ইবাদতের সংকল্প করলেন—যেমন সারারাত নামাজ, প্রতিদিন রোজা, বা বিবাহ না করা—নবীজি (সা.) তাদের সংশোধন করে বললেন, ‘আমি রোজাও রাখি, আবার খাইও; নামাজও পড়ি, আবার ঘুমাই; বিবাহ করি—যে আমার পথ অনুসরণ না করে, সে আমার উম্মত নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০৬৩)
এটি ইসলামকে কঠোরতার পথ না বানিয়ে সহজ ও মানবিক রাখার এক স্পষ্ট দিকনির্দেশনা। নবীজি (সা.) বলেন, ‘এই দীন (ইসলাম) সহজ। কেউ এটিকে কঠোর করতে চাইলে, সে পরাভূত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৯) তাই ইসলামে আমল করতে হলে দরকার ধৈর্য, ধারাবাহিকতা ও বাস্তবতা অনুযায়ী কর্মপন্থা গ্রহণ। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজতা চান, কষ্ট নয়।’ (সূরা বাকারা: ১৮৫)
ইবাদতের ক্ষেত্রে মুমিনদের জন্য বার্তা স্পষ্ট: নিয়মিততা ও পরিমিততা আল্লাহর কাছে প্রিয়। আয়েশা (রা.)-এর জিজ্ঞাসায় নবীজি (সা.) বলেন, ‘সেই আমল আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়, যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা অল্প হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৪৬৪)
তাই ইসলাম পালনের সময় উগ্রতা নয়, বরং সচেতনভাবে এগিয়ে যাওয়াই হলো প্রকৃত পথ। ইবাদতে চাপ নয়, ভালোবাসা ও সাধ্যের মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব। অতএব, বাস্তবসম্মত, সহজ ও ধারাবাহিক ইবাদতের মাধ্যমেই মুমিন তার পরকালীন মুক্তির আশা করতে পারে।