
কোরআন শুধু তিলাওয়াতের নয়, অনুধাবনের কিতাব—এ কথাটি স্মরণ রাখা জরুরি। আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে যেমন কোরআন তিলাওয়াতের দায়িত্ব দিয়েছেন, তেমনি এর ব্যাখ্যা মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, “আমি তোমার প্রতি এক স্মরণিকা (কিতাব) অবতীর্ণ করেছি, যেন তা তুমি মানুষের জন্য ব্যাখ্যা করে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দাও।” (সুরা: জুমা, আয়াত: ২)
কোরআনের যথাযথ অনুধাবন না হলে নামাজসহ অনেক ইবাদতই অপূর্ণ থেকে যায়। তাই বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শেখা ফরজ, আর কোরআনের অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝা ফরজে কেফায়া। কেউ যদি চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে তা অর্জন করে, তবে পুরো উম্মত দায়মুক্ত হয়; না হলে সকলেই গুনাহগার হবে। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত কোরআনের অনুধাবনে আগ্রহী হওয়া।
অনুধাবনের মাধ্যমে কোরআন পাঠ করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়, হৃদয় আল্লাহর ভয়ে কেঁপে ওঠে, এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও প্রশান্তি জন্ম নেয়। আল্লাহ বলেন, “এই কোরআন এমন পথের নির্দেশনা দেয়, যা সবচেয়ে সরল।” (সুরা: বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৯) কোরআন মানুষের জীবনে সামগ্রিক হেদায়াতের উৎস—অন্তরের রোগ, সন্দেহ ও পাপপ্রবণতা থেকে আরোগ্য লাভ হয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বলা হয়েছে, “এটি অন্তরের রোগসমূহের নিরাময়কারী।” (সুরা: ইউনুস, আয়াত: ৫৭)
তাফসিরবিদ তাবারি (রহ.) বলেন, “যে ব্যক্তি কোরআনের অর্থ অনুধাবন না করে পড়ে, সে কীভাবে এর স্বাদ পাবে?” কোরআনের গভীর শব্দরূপ, এর ইতিহাস, বিজ্ঞান আর বিধান হৃদয়ে আলো জ্বালায়। ফলে মানুষ হালাল-হারামের সীমা জানতে পারে, আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত হয়।
পরিশেষে, কোরআন শুধু পাঠের নয়—চিন্তা, বোধ, অনুভব ও জীবনের পাথেয় বানানোর কিতাব। তাই তিলাওয়াতের পাশাপাশি গভীরভাবে অনুধাবন করাই হবে একজন মুমিনের জন্য প্রকৃত হেদায়াতের পথ।
এই আলোকে কোরআনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হোক হৃদয়ের, উপলব্ধির এবং জীবনবোধের।