ঢাকা   মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

স্বপ্ন বুননের নাম তানিয়া

স্বপ্ন বুননের নাম তানিয়া

ইকোনমিক্সে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করলেও তানিয়া নাজনীন সবসময় স্বপ্ন দেখতেন ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার। বাবার ইচ্ছায় অর্থনীতি পড়া হলেও নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দেননি তিনি। পড়াশোনার পর ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ডিপ্লোমা করে শুরু করেন নিজের পথচলা। ২০০৭ সালে টাঙ্গাইল ভ্রমণের সময় প্রথম ব্রোথেল সম্পর্কে জানেন তানিয়া। নারীদের এ অন্ধকার জগৎ দেখে তিনি মর্মাহত হন এবং ঠিক করেন—এই নারীদের জন্য কিছু করবেন। সেই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় সামাজিক উদ্যোগ ‘তানিস বাংলাদেশ’।

শুরুটা ছিল মাত্র ১২ হাজার টাকা দিয়ে। তখনকার দিনে সমাজের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া নারী, বিশেষ করে ঋষি পল্লির নারীদের কাজে যুক্ত করে তিনি তৈরি করেন এক অভিনব উদ্যোগ। তাদের নিজ হাতে তৈরি পোশাকের মধ্যে রয়েছে শাড়ি, কুর্তি, শ্রাগ, ব্যাগ, বেডশিটসহ আরও অনেক কিছু, যা পৌঁছে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, লন্ডনসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে।

তানিয়া সবসময় চেয়েছেন তার পণ্যগুলো পরিবেশবান্ধব হোক। তাই তিনি কাজ করেন আজো-ফ্রি কেমিক্যাল ও ন্যাচারাল ডাই দিয়ে। পাশাপাশি জিরো ওয়েস্ট নীতিতে কাপড়ের টুকরোগুলো দিয়ে বানান জ্যাকেট, কাঁথা—যাতে কোনো অপচয় না হয়। ২০২৩ সালে তার ব্যবসার বড় ক্ষতি হয়, ফেসবুক পেজ হ্যাক হয়ে যায়। এক সময় নিঃস্ব হয়ে পড়লেও হাল ছাড়েননি। ঘুরে দাঁড়িয়ে গাজীপুরে স্থাপন করেন নিজের প্রোডাকশন হাউস।

বর্তমানে তার দলে আছেন ১২০ জন নারী, যারা গ্রামীণ নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ঘরে বসে কাজের সুযোগ করে দেন। নারী ক্ষমতায়নের এমন দৃষ্টান্তমূলক কাজের জন্য তিনি ২০২৫ সালে ম্যানচেস্টার ট্রেড মিশনে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ক্লোদিং ব্র্যান্ড হিসেবে অংশ নেন এবং বিশ্বের ৫০ জন উদ্যোক্তার মধ্যে ছিলেন সবচেয়ে কনিষ্ঠ।

তানিয়া স্বপ্ন দেখেন, তার ‘তানিস বাংলাদেশ’ একদিন এমন একটি জায়গায় পৌঁছাবে, যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ সম্মানের সঙ্গে কাজ করবে। নতুন নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি তার বার্তা, “প্রথমে একটা লক্ষ্য ঠিক করুন। কী নিয়ে, কার জন্য কাজ করতে চান, সেটা বুঝুন। পথে বাধা আসবেই, কিন্তু এগিয়ে যেতে হবে সাহস আর পরিকল্পনায়।”