আমের মৌসুমে রাজশাহীর বাজারে নানা জাতের আম ক্রেতাদের মন কাড়ছে। তবে চাষিদের জন্য এবার পরিস্থিতি মোটেও সুখকর নয়। ব্যানানা ম্যাঙ্গো, ক্ষীরশাপাতি এবং আম্রপালি কিছুটা আশার আলো দেখালেও অন্যান্য জাত, বিশেষ করে লখনা আম, চাষিদের বড় ধরনের লোকসানে ফেলেছে।
চাষিদের হিসেবে এক কেজি আম উৎপাদন, পরিবহন এবং বিপণন খরচ পড়ে প্রায় ৩২ টাকা। এর মধ্যে জমি ইজারা, সার, কীটনাশক, পরিবহন এবং প্যাকেজিং খরচ যুক্ত থাকে। ফলে যেকোনো জাতের আম বিক্রির দাম এর কম হলেই লোকসান অনিবার্য।
ব্যানানা ম্যাঙ্গোয় আশা, লখনায় হতাশা
এবার মৌসুমে সবচেয়ে লাভজনক ব্যানানা ম্যাঙ্গো। প্রতি কেজি পাইকারি দাম ৮০-৮৫ টাকা এবং খুচরা বাজারে তা ১৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা কেজিপ্রতি ৪৮ টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন। অন্যদিকে, লখনা আমের বাজার সবচেয়ে খারাপ; প্রতি কেজি মাত্র ১২-১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা চাষিকে লোকসানে ফেলছে প্রায় ২০ টাকা।
ক্ষীরশাপাতি ও আম্রপালি ভালো যাচ্ছে
ক্ষীরশাপাতি এবং আম্রপালি আম ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা চাষিদের কেজিপ্রতি প্রায় ১৮ টাকা লাভ দিচ্ছে। বিশেষ করে রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে ক্ষীরশাপাতির দাম মণপ্রতি ২,৪০০ টাকারও বেশি।
ল্যাংড়া ও ফজলিতে লোকসান
ল্যাংড়া এবং ফজলির বাজারেও মন্দা। বিশেষ করে ফজলির দাম অনেকটাই কমেছে; অনেক চাষি কেজিপ্রতি ৩-১৫ টাকা পর্যন্ত লোকসানে আছেন।
আমচাষিদের হতাশা চরমে
রাজশাহীর অনেক চাষি জানান, লখনা আম আর রাখা সম্ভব নয়। অনেক বাগান থেকে আমগাছ কেটে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। সাদি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম বলেন, “এবার আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় বাজার অর্ধেক হয়ে গেছে।”
আমচাষের ভবিষ্যৎ
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, রাজশাহীর মাটি ও জলবায়ু আম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। অনেক চাষি নতুন, লাভজনক জাতের আমগাছ লাগাচ্ছেন। তবে অনেক পুরোনো আমবাগান কমে যাবে।
সব মিলিয়ে এ বছর আমের বাজারে উত্থান-পতন যেন চাষিদের অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে, আর লাভ-লোকসানের খেলায় অনেক কৃষকের মনোবল ভেঙে গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, নতুন জাত এবং আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে আগামীতে এ খাত আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
