
ময়মনসিংহ শহরের টাউন হল এলাকায় জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী ও সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়িতে ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ময়মনসিংহ মহানগর শাখা। সংগঠনটির দাবি, হামলাটি তাদের কর্মসূচি ছিল না বরং কেউ তাদের নাম ব্যবহার করে এই অপকর্ম করেছে।
শনিবার সকালে নিজেদের ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, তারা সামাজিক সম্প্রীতির পক্ষে এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে হামলার মতো অপরাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আহ্বায়ক মো. অলি উল্লাহ ও সদস্যসচিব আল নূর মোহাম্মদ আয়াসের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে ‘স্বার্থান্বেষী মহল’কে দায়ী করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
এ ঘটনায় সংগঠনের মহানগর শাখার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ওয়ালিদ আহমেদকে শোকজ করা হয়েছে। তাঁকে সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে তিন কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। তবে ওয়ালিদ পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, যারা শোকজ করেছেন, তাদের সেই এখতিয়ার নেই। তিনি বলেন, ‘দালাল মহলের কার্যক্রম সম্পর্কে সবাই জানে। তারা উপর মহলের চাপ পেয়ে আমাকে টার্গেট করেছে।’
রওশন এরশাদের পরিবার বর্তমানে দেশের বাইরে থাকায় পৈতৃক বাড়িটি দেখভাল করেন জাতীয় পার্টির মহানগরের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল। তিনি জানান, বাড়িটি রওশন একার না—চার বোন ও দুই ভাইয়ের পৈতৃক সম্পত্তি। ‘কুটুমবাড়ি’ নামে একটি রেস্তোরাঁ ভাড়াটিয়া হিসেবে ব্যবহার করছিল, যেখানে হামলা চালানো হয়।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট ওই বাড়িকে ‘দালাল মহল’ আখ্যা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরপর গত ২৩ এপ্রিল বাড়িটিতে রেস্টুরেন্ট নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করে সংগঠনটি, স্মৃতি জাদুঘর বানানোর দাবি জানায়।
আজ সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি, চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভাঙা ইটপাথর। রেস্তোরাঁ মালিক বজলুর রহমানকেও পাওয়া যায়নি। সংগঠনের জেলা সদস্যসচিব আলী হোসেন বলেন, ‘রওশন এরশাদকে “ফ্যাসিস্ট উৎপাদনে” সহায়তাকারী মনে করি, তাই তার বাড়িকে “দালাল মহল” হিসেবে দেখার দাবিতে অটল থাকব। তবে ভাঙচুর সমর্থন করি না।’
এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে, রাজনীতি ও ইতিহাসবোধের নামে ব্যক্তি ও সম্পত্তির ওপর আক্রমণ কতটা স্পর্শকাতর এবং সংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও কতটা তীব্র। ঘটনাটি তদন্ত করে দায়ীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।