
মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রদানকারী জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এর বিরুদ্ধে বড় ধরনের জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শনিবার আয়োজিত এক জরুরি ব্রিফিংয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বর্তমানে ‘নগদ’-এর কার্যক্রমের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এতে করে কোটি গ্রাহকের অর্থিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।
তিনি জানান, সাবেক সরকারের সময়ে ‘নগদ’-এ প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ৬৫০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ই-মানি তৈরি করা হয়েছিল, যার কোনো মূলধন ভিত্তি ছিল না। এই ঘটনায় জড়িত কয়েকজন কর্মকর্তা পালিয়ে গেলেও সম্প্রতি তারা আবার ফিরেছেন এবং নিয়ন্ত্রণও গ্রহণ করেছেন। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরিফ হোসেন খান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রশাসক ও পরিচালনা বোর্ড গঠন করেছিল। কিন্তু পালিয়ে যাওয়া কর্মকর্তারা আদালতে মামলা করে একতরফা আদেশে প্রশাসকের কার্যক্রম স্থগিত করিয়ে দেন। ফলে তারা আবার প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সব প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেন।
তিনি আরও জানান, এমন একজন ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাহী হিসেবে পুনর্বহাল করা হয়েছে, যিনি নিজেই জালিয়াতির মামলার আসামি। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদের আর কোনো অভ্যন্তরীণ তথ্য বা নিয়ন্ত্রণে নেই, ফলে গ্রাহকের অর্থ নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে।
এই পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিক ও গভীর ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে মুখপাত্র বলেন, “যে প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়, সেটির ওপর নিয়ন্ত্রণহীনতা ভয়াবহ পরিণতির দিকে যেতে পারে।”
এ সময় তিনি জানান, নগদের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান কেপিএমজি একটি প্রতিবেদনও দিয়েছে, যেখানে নানা ব্যত্যয়ের প্রমাণ রয়েছে।
নগদ পরিচালনার জন্য ডাক বিভাগের কোনো আর্থিক বা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নেই বলেও মন্তব্য করেন মুখপাত্র। বলেন, “মানুষের অর্থ নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলা চলতে পারে না। দায়মুক্ত এই কাঠামো অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।”
বিচার বিভাগীয় নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানি ১৯ মে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি। এ সময় সাধারণ গ্রাহকদের উদ্দেশে সতর্কতাও উচ্চারণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র।