২৪ মার্চ ২০২৩ শুক্রবার, ১২:৪১ পিএম
স্টাফ রিপোর্টার
শেয়ার বিজনেস24.কম
গরু ও খাসির মাংসের তুলনায় হরিণের মাংসের দাম কম হওয়ায় সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রাসহ আশপাশের এলাকায় এই বন্য প্রাণীর মাংসের চাহিদা বেড়ে গেছে। এ সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরা শিকারিরা। তারা বন বিভাগের টহল ফাঁকি দিয়ে হরিণ শিকার করে গোপনে বিক্রি করছেন।
শিকারিদের কাছ থেকে প্রতি কেজি হরিণের মাংস ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। অন্যদিকে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার টাকা। স্থানীয় লোকজন জানান, অবৈধ জেনেও কম দামে হাতের নাগালে পেয়ে হরিণের মাংস কিনছেন মানুষ।
সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় কয়েকটি চক্র অনেক আগে থেকেই হরিণ শিকারের সঙ্গে জড়িত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে তাদের তৎপরতা এত দিন কিছুটা কমলেও বর্তমানে ব্যাপক হারে বেড়েছে হরিণ শিকার। বিশেষ করে খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা ও জোড়শিং এলাকায় হরিণশিকারি চক্রের আধিপত্য বেশি।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) জোড়শিং এলাকা থেকে ৮৭ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করেছে কোস্টগার্ড। অভিযানের সময় কোস্টগার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে হরিণের মাংস ফেলে পাচারকারীরা পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে ৪টি ব্যাগে ভরা ৮৭ কেজি মাংস ও ২০টি হরিণের পা উদ্ধার করা হয়।
কয়রার বজবজা বন টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তানজিলুর রহমান বলেন, ‘পালিয়ে যাওয়া হরিণশিকারিরা কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের জোড়শিং এলাকার বলে আমরা ধারণা করছি।’
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কয়রায় ৩০টির বেশি চোরা শিকারি চক্র সুন্দরবনে ফাঁদ পেতে নির্বিচারে হরিণ নিধন করছে। চোরা শিকারি চক্র সুন্দরবনে ঢুকে ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে এবং তাদের সঙ্গে থাকেন এজেন্ট ব্যবসায়ীরা। এই এজেন্টদের মাধ্যমে কখনো অগ্রিম ফরমাশ (অর্ডার), আবার কখনো মাংস এনে তারপর বিক্রি করা হয়। তাদের ধরতে বন বিভাগও হিমশিম খাচ্ছে। এই চক্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে হরিণের মাংস। অনেক পেশাদার কসাইয়ের দোকানে গরু-ছাগলের মাংসের সঙ্গে কম দামে কেনা হরিণের মাংস মিশিয়ে বিক্রি করা হয়।
কয়রার জোড়শিং ও আংটিহারা গ্রামের কয়েক বাসিন্দা জানিয়েছেন, এ এলাকা দিয়ে প্রতি সপ্তাহে চোরা শিকারিরা সুন্দরবনে ফাঁদ পেতে শতাধিক হরিণ শিকার করে ৪০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়রার সুন্দরবনসংলগ্ন গ্রামগুলোতে বেশির ভাগই শ্রমজীবী মানুষের বসবাস। গ্রামের প্রতিটি পরিবারের কেউ না কেউ সুন্দরবনকেন্দ্রিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে মাছ ধরতে সুন্দরবনে প্রবেশ করে তাঁদের কেউ কেউ ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করেন। মাঝেমধ্যে দু–একটি অভিযানে হরিণের মাংস, চামড়া, মাথা উদ্ধার হলেও মূল চোরা শিকারি ও পাচারকারীদের কেউ আটক হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাংস বহনকারীরাই ধরা পড়ে।
বন বিভাগ ও পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, গত দুই মাসে পুলিশ, কোস্টগার্ড ও বন বিভাগের অভিযানে ৩৫৩ কেজি হরিণের মাংস, ১টি জবাই করা হরিণ, ৫টি চামড়া ও মাথা উদ্ধার হয়েছে। এ সময় ৫ জনকে গ্রেপ্তার ও কয়েকটি নৌকা জব্দ করা হয়। এসব ঘটনায় কয়রা থানা ও আদালতে ৮টি মামলা করা হয়েছে।
কয়রা থানার ওসি এ বি এম এস দোহা বলেন, ‘হরিণ শিকার ও পাচার রোধে আমরা সব সময় সতর্ক আছি। সুন্দরবনকেন্দ্রিক অপরাধ দমনে বন বিভাগের পাশাপাশি পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। অপরাধী যে-ই হোক আমরা তাঁকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, `জনবল কম হওয়া সত্ত্বেও সুন্দরবনের বন্য প্রাণী নিধন এবং অন্যান্য অপরাধ দমনে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন বনরক্ষীরা। এর মধ্যেও কিছু অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সেগুলো দমনে বন বিভাগ আন্তরিকভাবে কাজ করছে। সুন্দরবনের বন্য প্রাণী রক্ষায় বন বিভাগকে সহযোগিতা করতে স্থানীয় মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।`
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।