
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে চলতি ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের (তৃতীয় প্রান্তিক) আর্থিক প্রতিবেদনে মিশ্র চিত্র দেখা যাচ্ছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, খাতটির ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৫টি কোম্পানি তৃতীয় প্রান্তিকের হিসাব প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ২৩টি কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস কমেছে, অপরদিকে বেড়েছে ২০টি কোম্পানির।
ইপিএস কমেছে যেসব কোম্পানির:
আলোচ্য প্রান্তিকে ‘এইচআর টেক্সটাইল’ সবচেয়ে বেশি লোকসানে গেছে—প্রতিশেয়ার লোকসান ১৫ টাকা ৬৮ পয়সা, যেখানে গত বছর এ সময় লোকসান ছিল ৩ টাকা ৩৩ পয়সা। এছাড়া উল্লেখযোগ্য ক্ষতির মুখে পড়েছে ‘ঢাকা ডাইং’ (১ টাকা ৬৩ পয়সা), ‘অনলিমা ইয়ার্ন’ (১ টাকা ১২ পয়সা), এবং ‘ম্যাকসন্স স্পিনিং’ (১ টাকা ১২ পয়সা)।
‘আমান কটন’, ‘অলটেক্স’, ‘ড্রাগন সোয়েটার’, ‘রিংশাইন’, ‘জাহিন স্পিনিং’, ‘তাল্লু স্পিনিং’-এর মতো আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানিও লোকসানে গেছে বা আগের চেয়ে ইপিএস কমিয়েছে। তবে কিছু কোম্পানির আয় কমলেও তা এখনো পজিটিভ পর্যায়ে রয়েছে, যেমন ‘মালেক স্পিনিং’ (১.৪৩ টাকা, গতবার ছিল ১.৭৪ টাকা), ‘রহিম টেক্সটাইল’ (৩০ পয়সা, আগের বছর ৩৮ পয়সা)।
ইপিএস বেড়েছে যেসব কোম্পানির:
পজিটিভ চিত্র দেখা গেছে ২০টি কোম্পানিতে। সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স করেছে ‘এনভয় টেক্সটাইল’, যার তৃতীয় প্রান্তিকে ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৪৪ পয়সা, যা গত বছর ছিল মাত্র ১ টাকা ১৮ পয়সা। এছাড়া ‘হাওয়াওয়েল টেক্সটাইল’ (৮৬ পয়সা, আগের বছর ২৯ পয়সা), ‘আরগন ডেনিমস’ (৪০ পয়সা, আগের বছর ১৪ পয়সা), এবং ‘আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ’ (৭৬ পয়সা, আগের বছর ৭২ পয়সা) ইপিএস বাড়িয়েছে।
‘ডেল্টা স্পিনার্স’, ‘দুলামিয়া কটন’, ‘সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল’, এবং ‘এস্কোয়ার নিট কম্পোজিট’ পূর্বের লোকসান কাটিয়ে ইতিবাচক ইপিএস দেখিয়েছে।
বিশ্লেষণ ও প্রেক্ষাপট:
বস্ত্র খাত মূলত রপ্তানিনির্ভর হওয়ায় আন্তর্জাতিক অর্ডার, কাঁচামালের দাম, বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকট ও শ্রম ব্যয়—সবকিছুই ইপিএসের ওপর প্রভাব ফেলেছে। কিছু কোম্পানি উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে বা ব্যয় কমিয়ে ইপিএস বাড়াতে সক্ষম হয়েছে, আবার কিছু প্রতিষ্ঠান আগের লোকসানের ধারাবাহিকতা নিয়েই চলছে।
উপসংহার:
তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বস্ত্র খাত এখন এক মিশ্র বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এই তথ্যগুলো গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে, বিশেষ করে টেকসই প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোন কোম্পানি কতটা স্থিতিশীল, তা বিশ্লেষণে। এই খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানিভেদে পার্থক্য বিশ্লেষণ করা এখন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।