ঢাকা   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দশ বছরে সর্বনিম্নে শেয়ারবাজার: বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চরম ধস, কার্যকর পদক্ষেপ কোথায়?

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ২৬ মে ২০২৫

দশ বছরে সর্বনিম্নে শেয়ারবাজার: বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চরম ধস, কার্যকর পদক্ষেপ কোথায়?

দেশের শেয়ারবাজারে চলমান দরপতন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ধারাবাহিক পতনের ধারায় আজ সোমবার (২৬ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স নেমে এসেছে প্রায় দশ বছর আগের অবস্থানে। আজকের লেনদেন শেষে সূচকটি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭১৯.৩৮ পয়েন্টে, যা ২০১৫ সালের ২ মার্চের ৪ হাজার ৭১৯.৪০ পয়েন্টের প্রায় সমান। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এটি বিনিয়োগকারীদের আস্থার এক গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বাজারে এমন পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা চরমে পৌঁছেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে। যদিও বিএসইসি বাজার স্থিতিশীল করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে— যেমন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক, তথ্য প্রকাশে নজরদারি এবং বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা— তবে এসব প্রয়াস এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয়নি বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তা বাজারকে আরও নেতিবাচক প্রবণতায় ঠেলে দিচ্ছে। এতে শুধু শেয়ারবাজারই নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

আগামী ২৯ মে বিএসইসি বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছে। তবে তার আগেই সূচকের এই ভয়াবহ পতন বিনিয়োগকারীদের মনোবল ভেঙে দিয়েছে। তাদের মত, কেবল সভা বা আলোচনায় কাজ হবে না— আস্থা ফেরাতে চাই বাস্তবমুখী, দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপ।

আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৬.৯৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪,৭১৯.৩৮ পয়েন্টে। তবে ডিএসইএস সূচক সামান্য ০.৭৬ পয়েন্ট বেড়ে ১,০৩৩.৩২ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অন্যদিকে, ডিএসই-৩০ সূচক ৪.৬১ পয়েন্ট কমে ১,৭৪১.৯১ পয়েন্টে নেমেছে। অর্থাৎ সূচকের মিলিত চিত্র এখনো বড়সড় দুর্বলতার দিকেই ইঙ্গিত করছে।

আজ ডিএসইতে মোট ৩৯৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৮টির, কমেছে ১৬৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। ডিএসইতে আজ মোট লেনদেন হয়েছে ২৮২ কোটি ৬১ লাখ ৬২ হাজার টাকার শেয়ার, যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৪৭ কোটি টাকা বেশি।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)-এও একই চিত্র। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই আজ ৫২.৭৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ২১৪.২৪ পয়েন্টে। আজ সিএসইতে মোট ১১ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া ১৭৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৩টির দর বেড়েছে, ৮৩টির কমেছে এবং ১৮টির অপরিবর্তিত রয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে এখন আর সময় নেওয়ার সুযোগ নেই। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কার্যকর নেতৃত্বের মাধ্যমে বাজার কাঠামোতে পরিবর্তন আনা জরুরি— না হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো কঠিন হবে, এবং অর্থনীতি আরও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।