ঢাকা   বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেয়ার কারসাজিতে সাকিবের ২.২৬ কোটি টাকা জরিমানা

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ১৫ মে ২০২৫

শেয়ার কারসাজিতে সাকিবের ২.২৬ কোটি টাকা জরিমানা

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আলোচিত প্রতিষ্ঠান সোনালী পেপারের শেয়ারমূল্য কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর কারসাজিতে যুক্ত থাকার দায়ে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে ২ কোটি ২৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রতিষ্ঠানটির এপ্রিল মাসের এনফোর্সমেন্ট রিপোর্ট অনুযায়ী, দুই দফায় এ ধরনের কারসাজিতে জড়িত ১৩ জনকে মোট ২৯ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

জরিমানার তালিকায় সাকিব ছাড়াও রয়েছেন—আবুল খায়ের হিরু, কাজী সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাতবর, ডিআইটি কো-অপারেটিভ, কাজী ফুরিদ হাসান, কাজী ফুয়াদ হাসান, কনিকা আফরোজ, সাজেদ মাতবর, মোহাম্মদ বাশার, মোনার্ক হোল্ডিংস, মোনার্ক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস, সফটভিয়ন এবং জাভেদ এ মতিন।

বিএসইসির তদন্তে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ অক্টোবর এবং একই বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই কারসাজি চলে। এই সময় সোনালী পেপারের শেয়ারের দাম ১২৬ শতাংশ বেড়ে ৯৫৭ টাকা ৭০ পয়সায় ওঠে। সিন্ডিকেটটি এই প্রক্রিয়ায় ৩৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা রিয়েলাইজড এবং অতিরিক্ত ৫৫ কোটি টাকা আন-রিয়েলাইজড মুনাফা অর্জন করে।

বিএসইসি তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে, একাধিক ব্যক্তি সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে একটি সিন্ডিকেট গঠন করে শেয়ারমূল্য কৃত্রিমভাবে বাড়িয়েছে। তদন্তে সাকিবের সম্পৃক্ততা উঠে আসার পর তার পক্ষে আবুল খায়ের হিরু কমিশনে জমা দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, "এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এটি ইচ্ছাকৃত ছিল না, বরং অজ্ঞতার কারণে হয়েছে। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ভবিষ্যতে শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে আমি আরও সতর্ক থাকব।"

শুধু সোনালী পেপারই নয়, এপ্রিল মাসে আরও তিন কোম্পানির বিরুদ্ধে একই ধরনের কারসাজির দায়ে ব্যবস্থা নিয়েছে বিএসইসি। এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং জেমিনি সি ফুড—এই তিন কোম্পানির শেয়ারমূল্য কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২৪ জনকে মোট ৫৪ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এর মধ্যে, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির দায়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সায়াদুর রহমান ও তার সহযোগীদের ১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা এবং নূরজাহান বেগম ও তার সহযোগীদের ৭৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জেমিনি সি ফুডের ঘটনায় পাঁচজনকে মোট ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ঘটনায় আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীদের অতিরিক্ত ১৯ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।

বিশ্লেষণ ও উপসংহার:
এই ঘটনাগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধাক্কা দিয়েছে। সেলিব্রিটি বা প্রতিষ্ঠানের নাম থাকলেই আইন লঙ্ঘনের সুযোগ নেই—এটি বিএসইসির সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকা ও সচেতন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি, নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরও কঠোর নজরদারি ও শাস্তির নজির বজায় রাখাই এখন সময়ের দাবি।