ঢাকা   বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

১৭ বছরেই লাখপতি উদ্যোক্তা: নীলফামারীর কিশোরী ঐশীর গল্প

নারী ও নারী উদ্যোক্তা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:৪০, ১৪ মে ২০২৫

১৭ বছরেই লাখপতি উদ্যোক্তা: নীলফামারীর কিশোরী ঐশীর গল্প

নীলফামারীর এক নির্জন গ্রামে একাকিত্ব কাটাতে শুরু করেছিলেন শখের বসে হাতে তৈরি শোপিস বানানো। আজ সেই শখই হয়ে উঠেছে ব্যবসা, আর ঐশী হয়ে উঠেছেন সফল উদ্যোক্তা—মাত্র ১৭ বছর বয়সেই! এসএসসি পরীক্ষার পর ঢাকার ব্যস্ততা ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসেন তানিশা তানভী ঐশী। তখনই এক বন্ধুর সহায়তায় একটি ফেসবুক পেজ খুলে শুরু করেন কনক্রিট দিয়ে তৈরি হ্যান্ডমেড শোপিস আর হোম ডেকর প্রোডাক্ট বিক্রি। সেখান থেকেই শুরু তার উদ্যোক্তা যাত্রা।

ঐশী মূলত কনক্রিট দিয়ে বানান ডেকোর আইটেম, ক্যান্ডেল ও ক্যান্ডেল স্ট্যান্ড, কোস্টার, নানা শেইপের প্ল্যান্টার, শোপিস ও ভাস। প্রতিটি প্রোডাক্ট তিনি নিজ হাতে তৈরি করেন এবং ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী কাস্টম ডিজাইন দেন। হোম ডেকরকে শিল্পের রূপ দেওয়াই তার লক্ষ্য। পরিবার ছিল তার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তার বোন বিদেশ থেকে কাঁচামাল পাঠাতেন, বাবা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করে দিতেন। ঘরে আগে থেকেই কারুশিল্পের পরিবেশ ছিল, যা তাকে শৈশব থেকেই তৈরি করেছে এই পথে এগিয়ে যেতে।

এ কাজে ঐশীর পাশে আছে তার পরিবার ও দুটি ছোট হেল্পার। একজন নবম শ্রেণিতে পড়ে, অন্যজন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। তার মা রং থেকে শুরু করে ডিজাইন ও গুছিয়ে দেওয়ার প্রতিটি ধাপে পাশে থাকেন। ছোট ভাই মাঝে মাঝে প্রোডাক্ট তৈরিতে সহায়তা করে আর বাবা প্যাকেজিংয়ের দায়িত্ব নেন। এভাবেই তাদের পরিবারটি গড়ে তুলেছে এক ছোট টিম।

শুরুতে অনেকেই ঐশীর কাজকে গুরুত্ব দেননি, ভেবেছিলেন এটা কেবল টাইমপাস। কাঁচামাল সংগ্রহে ছিল চ্যালেঞ্জ, আর পড়াশোনা ও কাজ একসঙ্গে সামলানোও সহজ ছিল না। তবে ঐশী হার মানেননি। ভালোবাসা, ধৈর্য আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে গেছেন প্রতিটি ধাপে।

মাত্র ৫০০ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করা এই ছোট উদ্যোগ থেকে বর্তমানে তিনি প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ টাকা আয় করেন। ভবিষ্যতে ঐশী চান একটি বড় স্টুডিও গড়ে তুলতে, যেখানে তিনি আরও তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজের সঙ্গে যুক্ত করবেন। তার স্বপ্ন, তার হ্যান্ডমেড প্রোডাক্ট একদিন আন্তর্জাতিক বাজারেও পরিচিতি পাক। পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে চান তিনি, কারণ তার বিশ্বাস—জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাই তাকে আরও দূরে নিয়ে যাবে।