ঢাকা   রোববার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

ইরানি জ্বালানি অবকাঠামোয় ইসরায়েলের হামলা: বিশ্ববাজারে উত্তপ্ত হচ্ছে তেল-গ্যাস যুদ্ধ

বিশেষ প্রতিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৭:৫১, ১৬ জুন ২০২৫

ইরানি জ্বালানি অবকাঠামোয় ইসরায়েলের হামলা: বিশ্ববাজারে উত্তপ্ত হচ্ছে তেল-গ্যাস যুদ্ধ

ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল ও গ্যাস অবকাঠামোয় নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলায় আগুন ধরে গেছে শাররান জ্বালানি ডিপো, তেহরানের তেল শোধনাগার ও দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্স’-এ। এতে শুধু মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা নয়, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কাও প্রবল হয়ে উঠেছে।

গত শুক্রবার ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলায় উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী নিহত হন। এর জবাবে তেহরান পাল্টা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েলের শহরগুলোতে। পাল্টাপাল্টি আক্রমণে ইরানে ২২৪ জন এবং ইসরায়েলে ১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে দুই পক্ষের দাবি। এতে করে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে দুই দেশ, যা অঞ্চল ও বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তুলছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্স’-এ ইসরায়েলের বিমান হামলায় উৎপাদন جزভাগে বন্ধ হয়ে গেছে। ‘ফেইজ ১৪’ প্ল্যান্ট ও ফজর-জাম গ্যাস প্ল্যান্টে আঘাতের কারণে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে। এই গ্যাসক্ষেত্র কাতার ও ইরান যৌথভাবে ব্যবহার করে এবং এটি থেকে আসে ইরানের দুই-তৃতীয়াংশ গ্যাস সরবরাহ।

শুধু সামরিক দিক থেকেই নয়, জ্বালানি অবকাঠামোগুলোর কৌশলগত গুরুত্বও বিশাল। তেহরানের শাররান জ্বালানি ডিপোতে রয়েছে ২৬ কোটি লিটার তেল সংরক্ষণের ব্যবস্থা, যা রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের মূল কেন্দ্র। তেল শোধনাগারে দৈনিক ২.২৫ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াজাত হয়। এ সব স্থাপনায় আঘাত মানে দেশের জ্বালানি নেটওয়ার্কে বড় ধাক্কা।

বিশ্বজুড়ে নজর এখন হরমুজ প্রণালির দিকে। ইরান জানিয়েছে, উত্তেজনা বাড়লে তারা এই প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে। বিশ্বের ২০ শতাংশ তেল সরবরাহ হয় এই পথ দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসন একে ‘বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চোকপয়েন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

বিশ্লেষক অ্যালান এয়ার বলেন, ইসরায়েল চায় যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে সম্পৃক্ত হোক এবং ইরানি সরকারের পতন ঘটুক। তবে ইরানের প্রতিক্রিয়া ছাড়া উপায় নেই, কারণ তাদের জন্য এটি জাতীয় সম্মান ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার প্রশ্ন। কিন্তু বড় ধরনের ক্ষতি করার মতো সামর্থ্য ইরানের নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ইসরায়েলের এই আক্রমণ শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বিশ্বজুড়ে জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য এক নতুন হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সোমবার বিশ্ববাজার খুললে তেলের দামে বড় উল্লম্ফন দেখা যেতে পারে, যা বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির চাপ আরও বাড়াবে।