
দুর্নীতির অভিযোগে চীনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ৯ জন সামরিক কর্মকর্তাকে দল ও সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত করছে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। গতকাল শুক্রবার চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
২০২৩ সাল থেকে চীন সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে। এর আগে কখনো সামরিক বাহিনীর এত শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা বরখাস্ত হননি।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ওই দুই শীর্ষ কর্মকর্তাসহ মোট নয়জন জেনারেলকে গতকাল শুক্রবার বরখাস্ত করা হয়েছে। কয়েক দশকের মধ্যে চীনের সামরিক বাহিনীতে এটাই দুর্নীতির অভিযোগে সবচেয়ে বড় দমনমূলক অভিযান।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ওই নয়জনের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। বরখাস্ত হওয়া বেশির ভাগ সেনা কর্মকর্তাই তিন তারকা জেনারেল।
বরখাস্ত হওয়া সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন চীনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের (সিএমসি) ভাইস চেয়ারম্যান জেনারেল হে ওয়েইডং ও চীনা সেনাবাহিনীর সাবেক শীর্ষ রাজনৈতিক কর্মকর্তা নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল মিয়াও হুয়া।
হে ওয়েইডংয়ের বরখাস্ত হওয়া ১৯৬৬-১৯৭৬ সালে চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পর সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের দায়িত্বরত কোনো জেনারেলের বরখাস্ত হওয়ার প্রথম ঘটনা।
গত মার্চ থেকে হে ওয়েইডংকে আর জনসমক্ষে আসতে দেখা যায়নি। তবে তাঁর কার্যক্রমের ওপর তদন্ত চলার বিষয়টি এর আগে কখনোই প্রকাশ করা হয়নি।
গত বছরের নভেম্বর মাসে ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গের গুরুতর অভিযোগে’ মিয়াও–এর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছিল। তারপর গত জুন মাসে তাঁকে সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশন থেকে বরখাস্ত করা হয়।
প্রেসিডেন্ট সি ‘ঘর পরিষ্কার করছেন’
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাং শিয়াওগাং বলেছেন, হে, মিয়াও এবং বিবৃতিতে উল্লিখিত আরও সাত জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা দলীয় শৃঙ্খলা গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছেন এবং দায়িত্ব পালনের সময় খুবই বড় অঙ্কের একটি আর্থিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তাঁদের অপরাধ গুরুতর প্রকৃতির এবং অত্যন্ত ক্ষতিকর পরিণতি বয়ে এনেছে। এটি দল ও সামরিক বাহিনীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
৬৮ বছর বয়সী হে ওয়েইডংয়ের বরখাস্ত হওয়া সামরিক বাহিনীর সীমার বাইরেও প্রভাব ফেলেছে। কারণ, তিনি একই সঙ্গে ২৪ সদস্যের পলিটব্যুরোর সদস্যও ছিলেন। চীনে কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্থা এটি।
কমিশনের দুই সহ-চেয়ারম্যানের একজন হিসেবে জেনারেল হে ছিলেন পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) তৃতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী কমান্ডার। তিনি প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবেও বিবেচিত হতেন।
এমন একটি সময়ে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বরখাস্তের ঘোষণা এল, যখন কয়েক দিন পরই রাজধানী বেইজিংয়ে কমিউনিস্ট পার্টির সেন্ট্রাল কমিটির চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
দুই শতাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে নিয়ে গঠিত সেন্ট্রাল কমিটি একটি অভিজাত পর্ষদ। ওই সভায় কর্মী সংক্রান্ত আরও কিছু সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
আটলান্টিক কাউন্সিলের গ্লোবাল চায়না হাবের ফেলো ওয়েন-টি সাং বলেন, ‘সি নিশ্চিতভাবে ঘর পরিষ্কার করছেন। হে ও মিয়াওকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরখাস্তের মাধ্যমে তিনি চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ সভায় সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনে নতুন সদস্য নিয়োগ করতে পারবেন। গত মার্চ মাস থেকে কমিটি কার্যত অর্ধেকটা ফাঁকা হয়ে আছে।’
বিবিসির খবর অনুযায়ী, বরখাস্ত করা নয়জন হলেন—সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের (সিএমসি) ভাইস চেয়ারম্যান হে ওয়েইডং, সিএমসির রাজনৈতিক বিভাগের পরিচালক মিয়াও হুয়া, সিএমসির রাজনৈতিক বিভাগের উপনির্বাহী পরিচালক হে হংজুন, সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের জয়েন্ট অপারেশনস কমান্ড সেন্টারের কর্মকর্তা ওয়াং সিউবিন, ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের সাবেক কমান্ডার লিন সিয়াংইয়াং, সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার কিন শুতং, নৌবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার ইয়ুআন হুয়াজি, রকেট ফোর্সেস কমান্ডার ওয়াং হৌবিন এবং আর্মড পুলিশ ফোর্স কমান্ডার ওয়াং চুনিং।