ঢাকা   রোববার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

মানবসৃষ্ট উষ্ণতায় অতিরিক্ত ৩০ দিন গরমে ভুগেছে অর্ধেক বিশ্ব

বিশেষ প্রতিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২০:৪৯, ৩০ মে ২০২৫

মানবসৃষ্ট উষ্ণতায় অতিরিক্ত ৩০ দিন গরমে ভুগেছে অর্ধেক বিশ্ব

জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব আরও স্পষ্ট হলো একটি নতুন বৈজ্ঞানিক গবেষণায়। এতে উঠে এসেছে, ২০২৪ সালের মে থেকে ২০২৫ সালের মে—এই এক বছরে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে (প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ) অতিরিক্ত অন্তত ৩০ দিনেরও বেশি তীব্র গরম সহ্য করতে হয়েছে, যা শুধুই মানবসৃষ্ট উষ্ণতার কারণে ঘটেছে।

‘গ্লোবাল হিট অ্যাকশন ডে’ উপলক্ষে প্রকাশিত এই গবেষণা পরিচালনা করেছে ক্লাইমেট সেন্ট্রাল, রেড ক্রস–রেড ক্রিসেন্ট ক্লাইমেট সেন্টার এবং বিশ্ব আবহাওয়া বিশ্লেষণ সংস্থা। গবেষকরা জানাচ্ছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বিশ্বের প্রতিটি মহাদেশেই চরম গরমের মাত্রা ও সংক্রমণ ভয়াবহভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই তাপদাহ মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করছে।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, এই এক বছরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ৬৭টি বড় ধরনের তাপপ্রবাহ দেখা গেছে—প্রতিটি ক্ষেত্রেই জলবায়ু পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রভাব ছিল। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ছিল ক্যারিবিয়ান দ্বীপ আরুবা, যেখানে ১৮৭টি চরম গরমের দিন রেকর্ড করা হয়েছে—যা সাধারণ অবস্থার চেয়ে ৪৫ দিন বেশি।

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের জলবায়ু বিজ্ঞানী ফ্রিডেরিকে অটো বলেন, ‘প্রতি ব্যারেল তেল পোড়ানো এবং প্রতি টন কার্বন নিঃসরণ মানে আরেকটি জীবন হুমকির মুখে পড়ছে।’ তিনি হুঁশিয়ারি দেন, উষ্ণতা ও তাপপ্রবাহ বন্ধ করতে হলে অভিযোজনই যথেষ্ট নয়—জরুরি ভিত্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

এদিকে, গবেষণাটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো যখন ২০২৪ সালকে ইতিমধ্যেই ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বছরের গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে, যা প্যারিস চুক্তির সীমা অতিক্রম করেছে।

গবেষকরা আরো বলেন, নিম্নআয়ের দেশগুলোতে তাপজনিত মৃত্যু ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কিত তথ্য প্রায় অনুপস্থিত। যেমন, ইউরোপে ২০২২ সালের গ্রীষ্মে তাপপ্রবাহজনিত মৃত্যু হয়েছিল ৬১ হাজারের বেশি, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই পরিসংখ্যান অনুপস্থিত থেকে যায় বা ভুলভাবে চিহ্নিত হয়।

বিশেষজ্ঞরা শহরভিত্তিক হিট অ্যাকশন পরিকল্পনা, জনসচেতনতা, ছায়া ও বাতাস চলাচলের উপযোগী নির্মাণ এবং আগাম সতর্কতা ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছেন। তবে তাদের মতে, এসব ব্যবস্থা যতই নেওয়া হোক না কেন, মূল সমাধান হলো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করা। তা না হলে ভবিষ্যতের গ্রীষ্ম হবে আরও দীর্ঘ, আরও গরম—এবং আরও মারাত্মক।