সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে হত্যা না করতে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ—এমন বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেছেন মার্কিন সিনেট সদস্য জিন শাহিন। গত সপ্তাহে ট্রাম্প-শারা বৈঠকের ঠিক আগেই বাদশাহ এ সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সিনেটে এক গুরুত্বপূর্ণ শুনানিতে এ কথা বলেন ডেমোক্রেটিক দলের এই সিনেটর।
জিন শাহিনের বক্তব্যে উঠে এসেছে ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরে শারাকে ঘিরে বিভক্ত অবস্থান। তিনি বলেন, “আমি উদ্বিগ্ন যে, প্রশাসনের কিছু মহল শারাকে হত্যার বিকল্প পরিকল্পনাও বিবেচনায় নিয়েছিল।” এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জর্ডানের বাদশাহ সরাসরি সতর্ক করেছিলেন যে, এই ধরনের নেতৃত্ব পরিবর্তন সিরিয়াকে ফের গৃহযুদ্ধের মুখে ঠেলে দিতে পারে, যা বর্তমানে দেশটিতে স্থিতিশীলতার সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই মন্তব্য আসে এমন এক সময়ে যখন ট্রাম্প প্রশাসন সিরিয়ার ওপর ১৯৭৯ সাল থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ও আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কিছুদিন আগে সৌদি আরবে শারার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন এবং তাকে ‘তরুণ, আকর্ষণীয় ও যোদ্ধা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তবে এই ঘোষণায় হোয়াইট হাউসের ভেতরেই অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা নিজেদের উপেক্ষিত মনে করছেন। এমনকি সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিলের পক্ষে থাকা কর্মকর্তারাও বলছেন, এই ঘোষণা তাদের অবহিত না করেই দেয়া হয়েছে।
শুনানিতে ট্রাম্পের মনোনীত মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি জোয়েল রেইবার্ন বলেন, “আমি কোনো গুপ্তহত্যা পরিকল্পনার কথা জানি না। তবে প্রেসিডেন্টের বক্তব্য ও উদ্যোগের সঙ্গে এমন কিছু মেলেও না।” একই সঙ্গে তিনি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে সাহসী ও ‘নতুন অধ্যায়ের সূচনা’ বলেও মন্তব্য করেন।
শারার অতীত পরিচিতি একসময় ছিল মার্কিনবিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। তিনি হায়াত তাহরির আল-শাম (HTS)-এর সাবেক কমান্ডার এবং এক সময় আল-কায়েদার অনুগত ছিলেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র তাঁর মাথার জন্য এক কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তবে ২০২৫ সালে বাইডেন প্রশাসন তা প্রত্যাহার করে নেয়। এখনো তাঁর নাম ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ তালিকায় থাকলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাওয়ায় সেটি বাতিলও হতে পারে।
ট্রাম্পের ঘোষণার পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। সিরিয়া এখন উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী, যেখানে তুরস্ক হয়ে উঠেছে শারার অন্যতম প্রধান মিত্র। ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন, সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তাঁর ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন।
সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার অংশ হিসেবে ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত পরোক্ষ আলোচনা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিরিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা সবার সঙ্গে শান্তি চাই।”
এই প্রেক্ষাপটে স্পষ্ট হচ্ছে, সিরিয়ার রাজনীতিতে নতুন মোড় নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশলে, যার পেছনে রয়েছে জটিল কূটনৈতিক চাল, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সমীকরণ। আর সেই প্রেক্ষাপটে জর্ডানের বাদশার সতর্কবার্তাটি হয়ে উঠেছে একটি তাৎপর্যপূর্ণ কূটনৈতিক বার্তা।
























