
ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে ভয়াবহ এক সহিংসতায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের তামু জেলায় সম্প্রতি ১০ বিদ্রোহীকে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতের আধাসামরিক বাহিনী আসাম রাইফেলস। নিহতদের মধ্যে তিনজন কিশোরও ছিল। ভারত দাবি করছে, এরা সবাই সশস্ত্র ও যুদ্ধসরঞ্জাম বহন করছিল। তবে মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) বলছে, তাদের সদস্যদের কোনো সংঘর্ষে নয়, বরং আটক করে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতরা সবাই এনইউজির সশস্ত্র শাখা পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসের (পিডিএফ) অন্তর্ভুক্ত পা কা ফা (পিকেপি)-এর সদস্য। হত্যাকাণ্ডের পর গণচিতায় তাঁদের দাহের প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। এনইউজি দাবি করেছে, ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে এসব বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আগে থেকেই বোঝাপড়া ছিল—কিন্তু এবার তা ভেঙে পড়েছে।
এ ঘটনাকে ঘিরে সীমান্তজুড়ে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা বেড়েছে। ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের ১,৬০০ কিমি দীর্ঘ সীমান্তবর্তী অঞ্চলের জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিরাজ করছে উৎকণ্ঠা। শরণার্থীরা আশঙ্কায় রয়েছেন, আবারও এমন হামলা হতে পারে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি কেবল একটি সামরিক অভিযানের অংশ নয়—বরং দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের সম্পর্কের নতুন টানাপোড়েনের ইঙ্গিত। বিশেষ করে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চাপা ক্ষোভ আরও দানা বাঁধছে।
তামু হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভারত সরকার একাধিক বিবৃতি দিলেও তাদের বক্তব্যে পরস্পরবিরোধিতা রয়েছে। কেউ বলছে, আগাম অভিযানে গিয়ে গুলি চালানো হয়, আবার কেউ বলছে, হামলার জবাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। এনইউজির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঘটনাটি পরিকল্পিত ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।
এখন প্রশ্ন উঠেছে—এই অভিযান আগাম হামলা, না প্রতিক্রিয়ামূলক আত্মরক্ষা? ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং সীমান্তব্যবস্থাপনায় এই ঘটনাটি এক নতুন বাস্তবতা সৃষ্টি করেছে, যা খুব দ্রুত আরও বড় ধরনের অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।