ঢাকা   শনিবার ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

নির্বাচনের আগে ঐক্যের ডাক: বিভাজনে সুযোগ নিচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা

রাজনীতি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৭:৫৮, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৮:০০, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

নির্বাচনের আগে ঐক্যের ডাক: বিভাজনে সুযোগ নিচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা

নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভাজনের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, কিছু শক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে নির্বাচনের সব আয়োজন ভেস্তে দিতে চায়। এসব অপচেষ্টা মোকাবিলায় সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত শক্তি প্রয়োজন।

জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস দলগুলোর প্রতি সংযম দেখানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকবে, কিন্তু সেটি যেন শত্রুতা বা সহিংসতায় রূপ না নেয়। “নির্বাচনের সময় উত্তেজনা থাকে, তবে সেটি একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই রাখতে হবে,”—উল্লেখ করেন তিনি।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে সংঘাত বাড়ার সুযোগেই পতিত আওয়ামী লীগ আবার শক্তি সঞ্চয় করেছে। তিনি দলগুলোর প্রতি কেবল দলীয় স্বার্থ নয়, বরং জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান।

বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক নেতারা ঐক্য ধরে রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তাঁদের মতে, ঐক্য ভেঙে পড়লে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার পথ সহজ হয়ে যাবে। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, “যেকোনো পরিস্থিতিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পরস্পরের দোষারোপ নয়, জাতির স্বার্থেই আমাদের অবস্থান স্পষ্ট রাখতে হবে।” একই সঙ্গে তিনি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের পরামর্শ দেন।

জামায়াতের নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সাম্প্রতিক বক্তব্যে পারস্পরিক দোষারোপ বেড়ে যাওয়ায় বিরোধীরা সুযোগ নিচ্ছে। ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানানো বন্ধ করে আগের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, জুলাই অভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করতে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিকল্পিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে ‘নরমালাইজড’ করার চেষ্টা চলছে—টক শো, প্রশাসনিক বৈঠক ও বিভিন্ন স্থানে তাদের সক্রিয় উপস্থিতি তার প্রমাণ। “আমাদের অনৈক্যকেই ষড়যন্ত্রকারীরা দুর্বলতা হিসেবে দেখছে,”—বলেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানকে সবাই মিলে ‘ওউন’ করতে না পারলে এর চেতনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিজেদের জন্য আলাদা নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঐক্যই সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা।

একই সুরে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে না পারলে কোনো নিরাপত্তাই আমাদের কাজে আসবে না।”

বৈঠক থেকে স্পষ্ট বার্তা আসে—নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বিভাজন নয়, জাতীয় ঐক্যই দেশকে অস্থিতিশীলতা ও ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করতে পারে।