
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্রদের অন্তর্ভুক্তিকে ‘ভয়ংকর ভুল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি মনে করেন, ছাত্রদের অকাল ক্ষমতা প্রদান যেমন তাদের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলেছে, তেমনি দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপিপন্থী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বক্তব্যে তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো ও নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং কিছু উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তুলে ধরেন।
তরুণদের 'অকাল ক্ষমতা' নষ্ট করছে ভবিষ্যৎ
ছাত্রদের উপদেষ্টা বানানোকে তিনি শুধু রাজনৈতিক ভুল নয়, বরং একটি ‘রাষ্ট্রীয় অদূরদর্শিতা’ বলে উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, “যারা ছাত্র অবস্থায় দল গড়ে আগামী দিনে রাজনীতির নেতৃত্ব দিতে পারত, তাদের এখনই মন্ত্রিত্ব দিয়ে ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দেওয়া হলো।”
তিনি আরও বলেন, “এ বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সনদ নেওয়ার সময়, সেখানে তারা এখন সচিবালয়ে তদবির, মবোক্রেসি আর অটোপাসের দাবিতে ব্যস্ত। এটি তাদের জন্য যেমন লজ্জাজনক, তেমনি দেশের জন্যও ক্ষতিকর। উপদেষ্টা পরিষদ তাদের ভুল পথে ঠেলে দিয়েছে।”
দুর্নীতির অভিযোগ ও ইউনূসকে ঘিরে হতাশা
বক্তব্যে মেজর হাফিজ বলেন, “কিছু উপদেষ্টা চেয়ারে বসার পর আত্মীয়স্বজন দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লাইসেন্স বাণিজ্য শুরু করেছেন।” এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং নৈতিক প্রশাসনের আশা ব্যর্থ হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এক বক্তব্য নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁর অভিযোগ, “ড. ইউনূস জাপানে গিয়ে বলেছেন শুধু বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়—যেটা অসত্য। বাস্তবে ৪২টি দল তাঁর সামনে গিয়ে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।”
নির্বাচনের দাবি ও মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গ
বিএনপির এ নেতা বলেন, “মুক্তিযোদ্ধারা যখন বলেন, অবিলম্বে নির্বাচন দরকার, তখন আর কোনো সার্টিফিকেটের দরকার পড়ে না। দেশ স্বাধীন হয়েছে তাদের রক্তে—তারা গণতন্ত্র চাইলে তা দেরি না করে নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি একহাত নেন কথিত ‘নতুন প্রজাতন্ত্র’ বা 'সেকেন্ড রিপাবলিক'-এর তত্ত্বকেও। তাঁর মতে, “একটি মহলের স্বাধীন বাংলাদেশ ভালো লাগে না বলেই বাহাত্তরের সংবিধান ছুড়ে ফেলার কথা বলছে। অথচ নির্বাচিত সরকার চাইলে সংবিধান সংশোধন করতেই পারে—তবে সেটি হওয়া উচিত গণরায় ভিত্তিক।”
উপদেষ্টার পদ নিয়ে নেতার কটাক্ষ
মেজর হাফিজ প্রশ্ন তোলেন, “গণতন্ত্রের জন্য যারা সংগ্রাম করেননি, এখন তাঁরাই উপদেষ্টা! অথচ যারা জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছে, তাঁরা বাদ। ইয়াহিয়া, এরশাদ, হাসিনার বিরুদ্ধে যারা লড়েছে, তারা আজও বাইরে দাঁড়িয়ে।” তাঁর মতে, এটি চরম বৈষম্য এবং রাজনৈতিক ন্যায়নীতির ব্যর্থতা।
সমগ্র বক্তব্যে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ছাত্রদের অকাল রাজনীতিকরণ, উপদেষ্টা পরিষদের দুর্নীতির অভিযোগ, এবং অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। পাশাপাশি তিনি অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক বৈধতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। তাঁর মতে, যেকোনো রাষ্ট্রীয় সংস্কার নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই হতে হবে, কোনো অস্থায়ী সরকারের ছত্রছায়ায় নয়।