ঢাকা   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘প্রণোদনা’ বাজেটেও খালি হাতে বিনিয়োগকারীরা: শেয়ারবাজারে নতুন করে হতাশা

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২ জুন ২০২৫

‘প্রণোদনা’ বাজেটেও খালি হাতে বিনিয়োগকারীরা: শেয়ারবাজারে নতুন করে হতাশা

দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের হতাশা ক্রমেই গভীর হচ্ছে। টানা দরপতন ও মন্দার কবলে পড়ে অনেকেই বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পাঁচ বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। লেনদেন কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারী—দু’পক্ষই এখন প্রতিদিন লোকসানের হিসাবেই দিন পার করছেন।

গত বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কিছুটা আশাবাদী হয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। তবে সেই আশার স্থায়িত্ব খুব কম সময়েই শেষ হয়েছে। বাজারে নতুন করে হতাশার ছায়া নেমেছে জাতীয় বাজেটকে ঘিরে। বিনিয়োগকারীরা বাজেটে প্রত্যক্ষ প্রণোদনার আশায় থাকলেও সেখানে তাঁরা কিছুই পাননি। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাশা পূরণ না করায় অসন্তুষ্ট বিনিয়োগকারীরা রাজপথেও প্রতিবাদে নেমেছেন।

ঘোষিত বাজেটে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু উদ্যোগ থাকলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রত্যক্ষ কোনো সুবিধা নেই। যেমন, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়—এমন কোম্পানির করপোরেট করহারের ব্যবধান কিছুটা বাড়ানো হয়েছে, ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের ওপর উৎসে কর কমানো হয়েছে, এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের কর কমানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের দাবি ছিল মূলধনি মুনাফা ও লভ্যাংশ আয়ের ওপর থেকে কর প্রত্যাহার—যা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

বাজেটে বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে শর্তসাপেক্ষে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২০ শতাংশ হবে, আর তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির জন্য এটি সাড়ে ২৭ শতাংশ। তবে নির্দিষ্ট ব্যাংক লেনদেনের শর্ত মানলে কর ব্যবধান নেমে আসবে ৫ শতাংশে। কিন্তু পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি চেয়েছিল ১০ শতাংশ ব্যবধান। এটি আমলে না নেওয়ায় বাজারে ভালো কোম্পানিগুলো আসবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানিকে আনতে হলে আরও কার্যকর ও উদ্দীপনামূলক উদ্যোগ দরকার ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কোম্পানিগুলোর সামনে এখনও তালিকাভুক্ত হওয়ার তেমন কোনো বিশেষ আকর্ষণ নেই। উপরন্তু তালিকাভুক্ত হলে নিয়মকানুন ও ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছে।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাজার সংস্কারের কিছু কথা শোনা গেলেও বাস্তবায়ন চলছে ধীরগতিতে। ফলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বাজেট ঘিরে তৈরি হওয়া আশা যেমন ম্লান হয়ে গেছে, তেমনি বিনিয়োগকারীদের মনেও জমেছে প্রশ্ন—এই বাজেট আদৌ কি বাজারে গতি ফিরিয়ে আনতে পারবে?