
সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে থাকা একটি অভিজাত ফ্ল্যাট জব্দ এবং দুটো ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক জয়নাল আবেদীন এই আবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, তাহসিন জ্ঞাত আয়ের বাইরে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে তা বিদেশে পাচার করেছেন। তাই তার নামে দুবাইয়ের স্থাবর সম্পত্তি জব্দ এবং ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন, যাতে করে পাচারকৃত অর্থ রাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।
দুদকের আবেদনে আরও বলা হয়, এই অপরাধ দণ্ডনীয় এবং তা দুদক আইন, ২০০৪-এর ধারা ২৭(১)-এর আওতায় ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। তাহসিন ছাড়াও তার পরিবারভুক্ত অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের অভিযোগ।
এর আগে, ২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মীর্জা এবং দুই মেয়ের বিরুদ্ধে চারটি পৃথক মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার অভিযোগনামা অনুযায়ী:
-
বেনজীর আহমেদ ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়ের বাইরে অর্জন করেন এবং ২ কোটি ৬২ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেন।
-
তার স্ত্রী জীশান মীর্জা ৩১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন এবং ১৬ কোটি ১ লাখ টাকার তথ্য গোপন করেন।
-
বড় মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন।
-
মেজো মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর ৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে দুদকের তদন্তে উঠে আসে।
দুদক বলছে, তদন্তের সময় তারা দেশ-বিদেশে এই পরিবারের নামে বিপুল সম্পদের খোঁজ পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জমি, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, কোম্পানি মালিকানা এবং ব্যাংক হিসাব। এই সম্পদ আয়ের উৎস বেনজীর বা তার পরিবারের কেউ দেখাতে পারেননি।
ফলে এখন প্রাথমিকভাবে যেসব বিদেশি সম্পদের খোঁজ মিলেছে, সেগুলো জব্দ ও অবরুদ্ধ করে অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুদক। তাহসিনের দুবাইয়ের ফ্ল্যাট ও ব্যাংক হিসাব এরই অংশ।
এ নিয়ে সমাজে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের এই পরিমাণ সম্পদ কিভাবে অর্জিত হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ ও বিশ্লেষকরা।