
ইসলাম নারীর অধিকার ও সম্মান প্রতিষ্ঠায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। ইসলামের আগমনের পূর্বে নারী ছিল অবহেলিত, অধিকারহীন ও পণ্যের মতো ব্যবহারযোগ্য; অথচ ইসলাম নারীকে দিয়েছে মানবাধিকার, আত্মমর্যাদা এবং সামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তা। নিচে ইসলাম প্রদত্ত নারীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধিকার তুলে ধরা হলো:
১. মানবিক মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমান
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “আমি তো আদম সন্তানদের মর্যাদা দিয়েছি” (সুরা: আল-ইসরা, আয়াত: ৭০)। ইসলাম নারীকে মা, কন্যা, স্ত্রী এবং সমাজের সদস্য হিসেবে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে। নারী কখনোই অধীনতা বা করুণার প্রতীক নয়, বরং স্বতন্ত্র পরিচয়ের অধিকারী।
২. জীবনের অধিকার ও নিরাপত্তা
জাহিলি যুগে কন্যাশিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। কোরআন তা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে: “যখন জীবন্ত কবর দেওয়া কন্যাশিশুকে জিজ্ঞেস করা হবে—কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে?” (সুরা: তাকভীর, আয়াত: ৮-৯)। ইসলাম নারীকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নিরাপত্তা দিয়েছে।
৩. শিক্ষা ও আত্মউন্নয়নের অধিকার
রাসুল (সা.) বলেছেন, “জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ” (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৪)। তিনি নারী সাহাবিদের জন্য আলাদা শিক্ষার ব্যবস্থা করতেন। আয়েশা (রা.) ছিলেন ইসলামের প্রথম সারির আলিমা, যিনি শিক্ষা ও ফতোয়া দিতেন।
৪. আর্থিক স্বাধীনতা ও উপার্জনের অধিকার
নারী তার উপার্জন, সম্পদ ও ব্যবসায় স্বাধীনভাবে মালিক। কোরআনে বলা হয়েছে, “নারীদের জন্য রয়েছে তাদের উপার্জনের নির্ধারিত অংশ” (সুরা: আন-নিসা, আয়াত: ৩২)। দান, ওয়াক্ফ, লেনদেনসহ আর্থিক কর্মকাণ্ডে নারীর পূর্ণ অধিকার রয়েছে।
৫. উত্তরাধিকার ও সম্পত্তির অধিকার
ইসলাম নারীকে ওয়ারিশ হিসেবে নির্ধারিত অংশ দিয়েছে। যদিও ছেলেকে দ্বিগুণ দেওয়া হয়, তা দায়িত্বভিত্তিক ইনসাফের প্রতীক। নারীর ওপর পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব না থাকায় তার প্রাপ্ত অংশই যথেষ্ট বলে বিবেচিত।
৬. বিবাহে নারীর সম্মতি ও স্বাধীনতা
নারীর মতামত ছাড়া তার বিবাহ বৈধ নয়। রাসুল (সা.) বলেন, “কোনো কুমারীকে তার মতামত ছাড়া বিবাহ দেওয়া যাবে না” (বুখারি, হাদিস: ৫১৩৬)। চাইলে নারী বিয়েও প্রত্যাখ্যান করতে পারেন এবং তালাক বা খোলা চাইতে পারেন।
৭. মাতৃত্বের সর্বোচ্চ মর্যাদা
মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে—“তোমার মা, তোমার মা, তোমার মা, তারপর তোমার বাবা” (বুখারি ও মুসলিম)। এতে দেখা যায়, মা হিসেবে নারীর অবদান ও গুরুত্ব সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত করা হয়েছে।
৮. সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার
নারীরা রাসুল (সা.)-এর কাছে মতামত দিয়েছেন, প্রশ্ন করেছেন এবং বায়াত গ্রহণ করেছেন। ইসলাম নারীকে সমাজে ভূমিকা রাখার অনুমতি দিয়েছে, তবে তা পর্দা ও শালীনতার সীমা মেনেই।
ইসলাম নারীকে করুণা নয়, মানবতার পূর্ণ মর্যাদাসম্পন্ন সদস্য হিসেবে বিবেচনা করে—যার রয়েছে সম্মান, অধিকার ও দায়িত্ব। এই নিখুঁত ভারসাম্যই ইসলামকে নারী-অধিকার রক্ষায় সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।