
গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে সাংবাদিকদের ভূমিকা কেমন ছিল, তা মূল্যায়ন করে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরির জন্য জাতিসংঘকে সহায়তা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। তিনি জানান, জাতিসংঘকে অনুরোধ করা হবে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করে বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন, শাপলা চত্বরের ট্র্যাজেডিসহ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করতে।
শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ‘জুলাই বিপ্লব স্মৃতি হলে’ আয়োজিত “জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশ: গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের মানুষ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা উপভোগ করছে। এখন কেউ খোলামনে লিখছেন, সমালোচনা করছেন, এমনকি গালিও দিচ্ছেন—কাউকে থামানো হচ্ছে না। তিনি দাবি করেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো প্রেসে তালা দেয়নি বা কোনো সাংবাদিকের কলম ভাঙেনি।
শফিকুল আলম বলেন, “কোনো গণমাধ্যম কর্মী যদি চাকরি হারায়, তাহলে প্রতিবাদ হোক সেই প্রতিষ্ঠানের সামনেই।”
আলোচনায় জুলাই আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামের কিছু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে আসে। প্রেসসচিব বলেন, “এটি গুরুতর অভিযোগ। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে দায়ীদের আইনের আওতায় আনা উচিত।”
তিনি আরো বলেন, ভারতের কিছু মিডিয়া এবং পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা অপপ্রচার চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। “ভিডিওর মাধ্যমে মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রতিটি গণমাধ্যমে ফ্যাক্ট-চেকিং সেল থাকা প্রয়োজন।”
সভায় প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, “বিগত সরকারের আমলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের হাত-পা বেঁধে ফেলেছিল। বর্তমান সরকার আইনটি বাতিলের পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।”
বিএফইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, “জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে পরিবর্তিত রাষ্ট্র কাঠামোকে আমরা এখনও পুরোপুরি ধারণ করতে পারিনি।” অন্যদিকে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, “আংশিক সত্য নয়, পুরো সত্যই সাংবাদিকতা। সাংবাদিক সুরক্ষায় এখনো কোনো আইন নেই—তা প্রণয়ন করতে হবে।”
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথিতযশা সাংবাদিক, শিক্ষক, আইনজীবী ও পেশাজীবী নেতারা, যারা সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং তথ্য বিশ্লেষণে দায়িত্বশীলতার আহ্বান জানান।