
জেলিফিশের অসংখ্য বিষাক্ত খোঁচা, উত্তাল সমুদ্র আর অবিরাম স্রোত—সব বাধাকে উপেক্ষা করে নিউজিল্যান্ডের ভয়ংকর কুক প্রণালি পাড়ি দিয়েছেন মাত্র ১৭ বছর বয়সী মার্কিন সাঁতারু মায়া মারহিজ। দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টা ধরে ২৭ মাইল (প্রায় ৪৪ কিলোমিটার) সাঁতরে তিনি জয় করেছেন বিশ্বের অন্যতম কঠিন জলপথটি। এ সময় প্রতি মিনিটে গড়ে ২৫ বার করে জেলিফিশের কাঁটার খোঁচা খেয়েছেন তিনি, যার যন্ত্রণায় তার মুখ, ঠোঁট, কান ও নাকেও ছিল ক্ষতের দাগ।
মায়া বলেন, “আমি গুনে গুনে শুরু করেছিলাম, কিন্তু একসময় যন্ত্রণায় গোনা বন্ধ করতে হয়।” তীব্র ব্যথা, শীতল পানি ও প্রবল স্রোতের মুখেও দমে যাননি তিনি। ভয়কে জয় করে সাঁতরেই চলেছেন এক নাগাড়ে, কেবল মাঝেমধ্যে নৌকায় থাকা দল থেকে অল্প খাবার খেতে বিরতি নিয়েছেন।
এই দুঃসাহসিক অভিযানের মধ্য দিয়ে মারহিজ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন ‘ওশেনস সেভেন’ চ্যালেঞ্জ পূরণের পথে—বিশ্বের সাতটি ভয়ংকর উন্মুক্ত জলপথে এককভাবে সাঁতার কাটার একটি সিরিজ, যা সম্পন্ন করলে তিনি হবেন সবচেয়ে কম বয়সী সফল সাঁতারু। এর আগে তিনি ইংল্যান্ড-ফ্রান্সের ইংলিশ চ্যানেল, হাওয়াইয়ের মোলোকাই চ্যানেল এবং লস অ্যাঞ্জেলেস উপকূলে ক্যাটালিনা চ্যানেল সফলভাবে পাড়ি দিয়েছেন।
মায়ার মতে, কুক প্রণালিই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সাঁতার। উত্তাল সাগর আর বিক্ষিপ্ত স্রোতের কারণে নির্ধারিত ১৩.৭ মাইলের দ্বিগুণ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে। “শেষের দিকে মনে হচ্ছিল গন্তব্য যেন আর কাছে আসছেই না,” বলেন তিনি। এ সময় মায়া নিজেকে বোঝাতে থাকেন, “দূরত্ব নয়, সাঁতার চালিয়ে যাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।”
রাতের বেলায় সাঁতার কাটতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন মায়া, কারণ এতে আশেপাশের ভয়ংকর প্রাণী চোখে পড়ে না এবং মনও বিভ্রান্ত হয় না। “চোখের আড়াল মানেই মনের আড়াল,”—এই মন্ত্রেই ভরসা করেন তিনি।
শুধু ক্রীড়ায় নয়, মানবিক কাজেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন মায়া মারহিজ। অলাভজনক সংস্থা ‘সুইম অ্যাক্রস আমেরিকা’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে শিশুদের ক্যানসার গবেষণার জন্য ইতিমধ্যেই ১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি তহবিল সংগ্রহ করেছেন তিনি।
এই দুর্দমনীয় মানসিক শক্তি ও মানবিক উদ্যোগে মায়া আজ বিশ্বের সামনে এক প্রেরণার নাম।