ঢাকা   বৃহস্পতিবার ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

শ্রমিকই উন্নয়নের ভিত্তি: মে দিবস কেবল ছুটির দিন নয়, একটি জাগরণের ডাক

জাতীয়

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:০১, ১ মে ২০২৫

সর্বশেষ

শ্রমিকই উন্নয়নের ভিত্তি: মে দিবস কেবল ছুটির দিন নয়, একটি জাগরণের ডাক

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস, অর্থাৎ মে দিবস, শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিক ছুটির দিন নয়—এটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও মর্যাদার এক অনন্য প্রতীক। প্রতিবছর ১ মে উদ্‌যাপিত এই দিনটি বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি ও সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় বার্তা দেয়। শিকাগোর রক্তাক্ত আন্দোলনের ইতিহাস থেকে জন্ম নেওয়া এ দিবস শ্রমিকের সম্মান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে তুলে ধরে, যা আজও সমান প্রাসঙ্গিক।

১৮৮৬ সালের ১ মে, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে দৈনিক ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবিতে হাজারো শ্রমিক রাস্তায় নামেন। শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলন ৪ মে হে মার্কেট স্কয়ারে রূপ নেয় সংঘর্ষে, ঘটে প্রাণহানি, মৃত্যু ঘটে নিরপরাধ শ্রমিক নেতাদের। তাঁদের আত্মত্যাগ বিশ্বজুড়ে শ্রমিক আন্দোলনের চেতনাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ১৮৮৯ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে-কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যা আজ ৮০টিরও বেশি দেশে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়।

বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে মে দিবস সরকারিভাবে পালিত হয়ে আসছে। এদিন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন ও সামাজিক সংগঠন র‍্যালি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানান কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করে। “শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, উন্নয়নের শপথ করি”—এমন স্লোগানে গর্জে ওঠে শ্রমিকদের দাবি আদায়ের আহ্বান।

তবে মে দিবসের তাৎপর্য কেবল মিছিল আর বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। দিনটিকে ঘিরে বাস্তবিক উদ্যোগ নিতে হবে শ্রমিকদের জন্য। শ্রমিকদের জন্য সম্মাননা অনুষ্ঠান, সচেতনতামূলক সেমিনার, বাস্তব দাবিদাওয়ার নিরীক্ষা ও সমাধানমূলক পদক্ষেপ, ত্রিপক্ষীয় সংলাপ এবং মানবিক সহায়তার মাধ্যমে তাঁদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে শ্রম আইন ২০০৬ প্রণয়ন, ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন, পেনশন ও বিমা চালু, শ্রম আদালত ও কল্যাণ তহবিল প্রতিষ্ঠার মতো অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে এসব আইনের কার্যকর বাস্তবায়নই শ্রমিকদের প্রকৃত উন্নয়নের চাবিকাঠি।

মে দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শ্রমিক শুধুমাত্র উৎপাদনের যন্ত্র নয়—তাঁর রক্ত, ঘাম ও শ্রমেই গড়ে ওঠে একটি জাতির ভিত্তি। তাঁকে সম্মান না দিলে উন্নয়ন হতে পারে বায়বীয়। তাই আজকের দিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক—শ্রমিকের জীবনমান, অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করে গড়ে তুলব একটি ন্যায্য, মানবিক ও টেকসই সমাজ।

সর্বশেষ