গ্রীষ্মের বাজারে রঙিন ফলের বাহার—আম, লিচু, তরমুজ, কাঁঠাল—সবই স্বাদে-ঘ্রাণে মোহিত করার মতো। কিন্তু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই ফলভাণ্ডার থেকে বেছে খেতে হয় অনেক হিসেব–নিকেশ করে। কারণ, প্রতিটি ফলে শর্করার মাত্রা ভিন্ন, যা সরাসরি প্রভাব ফেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার ওপর। তবে ভয়ের কিছু নেই—সঠিক মাত্রায়, সঠিক সময়ে আর সঠিক নিয়মে ফল খেলে ডায়াবেটিস রোগীরাও উপভোগ করতে পারেন মৌসুমি ফলের স্বাদ।
আম: সীমিত পরিমাণেই স্বাস্থ্যকর
গ্রীষ্মের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ফল আম, ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়। আমের গ্লাইসেমিক সূচক মাঝারি (৫৬) হলেও গ্লাইসেমিক লোড কম হওয়ায় এটি সীমিত পরিমাণে খাওয়া নিরাপদ। সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকলে প্রতিদিন একটি ছোট আম বা বড় আমের অর্ধেক অংশ ছোট টুকরায় খেয়ে উপভোগ করা যায়। তবে যাঁদের সুগার মাত্রা ওঠানামা করে, তাঁদের জন্য আম পরিহার করাই ভালো। আমে থাকা ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স, সি ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে, কিন্তু অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে—যা ডায়াবেটিসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
তরমুজ: সতর্কতার সঙ্গে উপভোগ করুন
৯২ শতাংশ পানি ও ইলেকট্রোলাইটে ভরপুর তরমুজ গ্রীষ্মে শরীর ঠান্ডা রাখে এবং হাইড্রেশন বজায় রাখে। যদিও এর গ্লাইসেমিক সূচক অনেক বেশি (৭৬), তবে গ্লাইসেমিক লোড কম (২)। তাই সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকলে দিনে ১৫০–২০০ গ্রাম তরমুজ খাওয়া নিরাপদ। তবে তরমুজ কখনোই মূল খাবারের সঙ্গে নয়—মধ্যসকাল বা ব্যায়ামের পর খাওয়া সবচেয়ে ভালো। যাঁদের রক্তে শর্করা অনিয়ন্ত্রিত, তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।
লিচু: পরিমিতি আর নিয়মে খান
গরমে চেহারায় হাসি ফেরায় রসালো লিচু। গ্লাইসেমিক সূচক ৫০ আর গ্লাইসেমিক লোড ৭.৬ হওয়ায় এটি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ। দিনে বড় ছয়টি (প্রায় ৪০ গ্রাম) লিচু খাওয়া যেতে পারে, তবে খালি পেটে বা রাতে ফল খাওয়া নয়। লিচুতে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। তবে রক্তে সুগারের পরিমাণ দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়াই শ্রেয়।
ডায়াবেটিস মানেই ফলকে বিদায় নয়, বরং সচেতনভাবে উপভোগ। ফল খাওয়ার আগে রক্তে সুগারের মাত্রা যাচাই, পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ এবং পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখাই হবে সুস্থতার চাবিকাঠি। গরমে গ্লুকোজের ওঠানামা সহজেই ঘটতে পারে, তাই সময় ও পরিমাণের ভারসাম্য বজায় রেখে চলুন, আর গ্রীষ্মকালীন ফলের স্বাদও উপভোগ করুন নিরাপদভাবে। ভালো থাকুন, সতর্ক থাকুন।
