ঢাকা   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেয়ারবাজারে ২০৮ কোটি টাকার কারসাজি: হিরু-সাকিব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিএসইসি’র ‘বড় শাস্তি’

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:২৯, ২ জুন ২০২৫

শেয়ারবাজারে ২০৮ কোটি টাকার কারসাজি: হিরু-সাকিব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিএসইসি’র ‘বড় শাস্তি’

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দেশের শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি কারসাজির দায়ে আলোচিত বিনিয়োগকারী ও সরকারি কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের হিরু এবং তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে অন্তত ডজনখানেক কোম্পানির শেয়ারে কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি, দর নিয়ন্ত্রণ ও সিন্ডিকেটভিত্তিক লেনদেনের মাধ্যমে বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ মুনাফা তুলে নেয়া হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে বিএসইসি ২০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার বিশাল অর্থদণ্ড দিয়েছে হিরু, তার পরিবার ও ব্যবসায়িক সহযোগীদের ওপর। এই তালিকায় রয়েছেন বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও।

রাজনৈতিক পালাবদলে বদলেছে কমিশনের রূপ

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হিরু ও তার নিকটজনদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠলেও শাস্তি সীমিত ছিল। তবে নতুন সরকারের অধীনে কমিশনের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসার পর থেকেই বিএসইসি কঠোর ভূমিকা গ্রহণ করেছে। খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পরপরই হিরু-সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দুর্বার অভিযান শুরু করে। সরকারি চাকরির বিধি লঙ্ঘন করে শেয়ার কারসাজিতে জড়ানোর দায়ে হিরুর বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট উচ্চমহলে বারবার অবহিত করেছে বিএসইসি।

কারসাজির ধরন ও প্রভাব

বিএসইসির তদন্ত অনুযায়ী, আবুল খায়ের হিরু তার স্ত্রী, বাবা, বোন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং পরিচিতজনদের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দর কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ফাঁদে ফেলেন। পরে সেই শেয়ার উচ্চদরে বিক্রি করে মোটা অংকের মুনাফা তুলে নেন। এর ফলে বাজারে স্বাভাবিক লেনদেন ব্যাহত হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

সাকিবের সম্পৃক্ততা ও বড় অঙ্কের জরিমানা

এই চক্রে আবুল খায়েরের ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে নাম এসেছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের। তার নাম জড়িয়েছে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্স, সোনালী পেপার ও ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতে। মোট চারটি ঘটনায় সাকিবকে প্রায় ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার জরিমানা করা হয়েছে।

বছরের পর বছর ধরে গড়া কারসাজির তালিকা

বিভিন্ন তারিখে ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে কারসাজির অভিযোগে যেসব জরিমানা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • ২০২২ সালের জুনে গ্রিন ডেল্টা, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স ও এশিয়া ইন্স্যুরেন্সে কারসাজির দায়ে হিরুর স্ত্রী ও তাদের প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ২ কোটি টাকা জরিমানা।

  • একই বছরের জুলাই-আগস্টে হিরুর বাবা, বোন ও ট্রাস্ট-কো-অপারেটিভকে প্রায় ৫ কোটি টাকা জরিমানা।

  • ২০২৪ ও ২০২৫ সালের বিভিন্ন সময়ে প্যারামাউন্ট, ডেল্টা লাইফ, ফরচুন সুজ, এনআরবিসি ব্যাংক ও সোনালী পেপারে কারসাজির ঘটনায় পৃথক পৃথক সময়ে জরিমানা করা হয় ৫০ কোটি থেকে ৭৭ কোটি টাকার মতো।

বিএসইসি’র প্রতিশ্রুতি: 'আরও কঠোর হবে অভিযান'

কমিশনের মুখপাত্র আবুল কালাম জানিয়েছেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং বাজারে স্বচ্ছতা আনতে এই ধরনের সিন্ডিকেট ধ্বংস করতেই কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন কারসাজিতে জড়িত কেউই ছাড় পাবে না—এমন হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।


হিরু-সাকিব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এই বিপুল অঙ্কের জরিমানা শুধু শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতেই নয়, বরং একটি স্পষ্ট বার্তা: আইন লঙ্ঘন করে কেউ পার পাবে না। বিএসইসি’র এই পদক্ষেপ দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত শেয়ার কারসাজির বিরুদ্ধেই এক ঐতিহাসিক জবাবদিহিতা।