ঢাকা   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

“সেদিনই আমার জন্মদিন, যেদিন ছেলের মুখে শুনব ‘বাবা’”—কানাডা থেকে কুমার বিশ্বজিৎ

“সেদিনই আমার জন্মদিন, যেদিন ছেলের মুখে শুনব ‘বাবা’”—কানাডা থেকে কুমার বিশ্বজিৎ


জন্মদিন নিয়ে শৈশবে দারুণ উচ্ছ্বাস থাকলেও এখন দিনটিকে আর তেমনভাবে দেখেন না জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ। ছোটবেলায় চাইতেন, জন্মদিন যেন পাঁচ দিন পরপর আসে! বায়না থাকত বাদ্যযন্ত্রের উপহার, যার অনেকগুলো জড়িয়ে আছে তাঁর সংগীতজীবনের শুরুতে। তবে গত দুই বছর ধরে জন্মদিন তাঁর কাছে কেবল আরেকটি সাধারণ দিন, কোনো আবেগ নেই, উচ্ছ্বাস নেই।

কারণ, দুই বছর ধরে কানাডায় শয্যাশায়ী তাঁর একমাত্র ছেলে নিবিড় কুমার। গতকাল ১ জুন ছিল কুমার বিশ্বজিতের জন্মদিন, আর সেদিনও তিনি ছিলেন ছেলের সঙ্গে কানাডার মিসিসাগায় একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে।

এই গায়ক বলেন, “জন্মদিন, উৎসব—এখন সবই মলিন লাগে। আগে আমার জন্মদিন নিয়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ ছিল ছেলের। ও চাইত, আমি সময় দিই। ঘুরতে যেতাম, কেক কাটতাম। কানাডায় পড়তে যাওয়ার পরও আমাকে সারপ্রাইজ দিতে দেশে চলে আসত। আজ সেই ছেলেটি শুধু চেয়ে থাকে। কথা বলতে পারে না। যেদিন ও ‘বাবা’ বলে ডাকবে, সেদিনই হবে আমার আসল জন্মদিন।”

কথায় কথায় গলার ভেতর জমে থাকা কষ্ট প্রকাশ করলেন এই শিল্পী। জানালেন, সন্তানের মুখ থেকে ‘বাবা’ শব্দটি শোনার অপেক্ষায় থেমে আছে তাঁর জীবন। “সব সময় মনে হয়, এখনই ডাকবে। এই বুঝি বলল ‘বাবা’। কিন্তু সে শুধু তাকিয়ে থাকে। আমার কিছু ভালো লাগে না,”—বলেন তিনি।

তবু ভক্তদের ভালোবাসায় তিনি আপ্লুত। ফেসবুকে ভক্ত-সহকর্মীরা তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, পাঠিয়েছেন ভালোবাসা। তিনি বলেন, “সবাইকে আলাদাভাবে ধন্যবাদ জানানোর অবস্থায় নেই। তবু তাদের ভালোবাসা আমি মাথায় তুলে রাখি।”

শৈশবে জন্মদিন মানেই ছিল বাদ্যযন্ত্রের অপেক্ষা। ড্রামস, গিটার, বেজ গিটার পেয়েছেন উপহার হিসেবে। তবে সবচেয়ে প্রিয় ছিল একটি টেপ রেকর্ডার। তখন তিনি ছিলেন চতুর্থ শ্রেণিতে। সেটিই হয়ে ওঠে তাঁর সংগীতজীবনের প্রথম শিক্ষক। গান রেকর্ড করে শুনতেন, ভুল ধরতেন, শেখার চেষ্টা করতেন।

তাঁর ভাষায়, “সেই টেপ রেকর্ডারই আমার সুর, তাল, লয় শেখার মাধ্যম ছিল। প্রযুক্তি তখন তেমন ছিল না। সেটা আমার শিক্ষক হয়ে ওঠে।”

এখন আর জন্মদিনে উপহার চান না কুমার বিশ্বজিৎ। চান কেবল ছেলের সুস্থতা। তাঁর কাছে আজ একটাই প্রার্থনা—নিবিড় সুস্থ হোক, আবার যেন বলে ওঠে—“বাবা।”