ঢাকা   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সেবাই ইবাদত: রোগীর পাশে যাঁরা, ইসলামে তাঁদের মর্যাদা অনন্য

ধর্ম

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২০:০৩, ১২ মে ২০২৫

সেবাই ইবাদত: রোগীর পাশে যাঁরা, ইসলামে তাঁদের মর্যাদা অনন্য

আজ ১২ মে, আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। বিশ্বজুড়ে আজকের দিনে স্নেহ, সহানুভূতি ও নিরলস পরিশ্রমে রোগীদের পাশে থাকা নার্সদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এই পেশা কেবল দায়িত্ব নয়—ইসলামের দৃষ্টিতে এটি এক মহান ইবাদত। ‘নার্সিং একটি পেশা নয়, সেবা’—এই আদর্শ সামনে রেখেই ১৯৬৫ সাল থেকে দিবসটি উদযাপন করে আসছে ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব নার্সেস (ICN)।

একজন ক্লান্ত, যন্ত্রণাকাতর মানুষকে পানি খাওয়ানো, ওষুধ প্রয়োগ কিংবা ভরসার হাত রাখা—এই প্রতিটি কাজ শুধু মানবতা নয়, বরং আখিরাতের অফুরন্ত সওয়াবের পথ খুলে দেয়। ইসলাম রোগীর সেবা ও জীবনরক্ষাকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “যে একটি প্রাণ রক্ষা করে, সে যেন পুরো মানবজাতিকে রক্ষা করল” (সুরা মায়েদা, আয়াত ৩২)।

চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক কিংবা স্বাস্থ্য সহকারী—যিনি আরোগ্যের পথে কাউকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেন, তিনিই এই আয়াতের মর্যাদা অর্জন করেন। রাসুল (সা.) নিজেও ছিলেন মানবতার শ্রেষ্ঠ সেবক। অসুস্থ ও অক্ষম মানুষদের খোঁজখবর নেওয়া ছিল তাঁর সুন্নাহ।

হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি কোনো রোগী বা ভাইয়ের সাক্ষাৎ লাভের জন্য যায়, সে জান্নাতের বাগানে প্রবেশ করে যতক্ষণ না ফিরে আসে” (মুসলিম)।

নারী সাহাবিদের মধ্যেও ছিলেন ইতিহাস গড়া নার্স—রুফাইদা আল আসলামিয়্যা (রা.) যাঁকে প্রথম নারী নার্স বলা হয়। খন্দকের যুদ্ধে তিনি আহত সাহাবাদের চিকিৎসা করতেন, এমনকি রাসুল (সা.) তাঁকে পুরুষ যোদ্ধাদের মতোই গণিমতের অংশ দিয়েছিলেন। ছিলেন হজরত উম্মে আতিয়াহ (রা.) ও উম্মে সুলাইম (রা.)—যাঁরা একাধিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে আহতদের সেবা করেছিলেন মমতায়।

স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত এইসব হাত শুধু সেবা দেয় না, বরং ইবাদতের মর্যাদায় মহিমান্বিত হয়। দার্শনিক ইমাম গাজ্জালী (রহ.) চিকিৎসাকে ফরজে কিফায়া বলে অভিহিত করেছেন—অর্থাৎ কেউ না করলে পুরো সমাজ গোনাহগার হবে। ইমাম ইবনে কুদামা (রহ.) বলেন, “রোগীর সেবা, শুশ্রূষা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় কাজ” (আল-মুগনি)।

এই দিনে প্রতিটি মুসলিম স্বাস্থ্যকর্মীর আত্মজিজ্ঞাসা হওয়া উচিত—আমার সেবা কি কেবল চাকরি, নাকি আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ? যদি নিয়ত হয় বিশুদ্ধ, তবে প্রতিটি ইনজেকশন, প্রতিটি হাসি জান্নাতের পথে সোপান হয়ে উঠতে পারে।

আসুন, আন্তর্জাতিক নার্স দিবসে আমরা সেইসব আলোর বাহকদের শ্রদ্ধা জানাই, দোয়া করি—আল্লাহ যেন তাঁদের দুনিয়া ও আখিরাতে মর্যাদা দান করেন।