ঢাকা   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

লভ্যাংশে শূন্য, লোকসানে লাল—ধুঁকছে ইউসিবি ও এবি ব্যাংক

শেয়ারবাজার

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৪:০০, ১ জুন ২০২৫

লভ্যাংশে শূন্য, লোকসানে লাল—ধুঁকছে ইউসিবি ও এবি ব্যাংক

 

দেশের ব্যাংক খাতে আর্থিক অস্থিরতা আর গভীর হচ্ছে। ২০২৪ সালে কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। একই সঙ্গে বছরের প্রথম প্রান্তিকেও তাদের মুনাফা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। আর অন্যদিকে তালিকাভুক্ত এবি ব্যাংক গভীর লোকসানে পড়ে বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও হতাশা তৈরি করেছে।

ইউসিবির লভ্যাংশ শূন্য, মুনাফা কমছেই

২০২৪ হিসাববছরের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। এ সময় ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় (EPS) ছিল মাত্র ০.০৫ টাকা, যেখানে ২০২৩ সালে ছিল ১.৪৫ টাকা। মুনাফার এমন পতনেই প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা থেকে বিরত রয়েছে।

২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকেও ইউসিবির আয় কমেছে। প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস আরও কমে দাঁড়ায় মাত্র ০.০৪ টাকায়, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ০.৪২ টাকা। ব্যাংকের হিসাবে এ ক্ষয়ের পেছনে মূলত ঋণ ও অগ্রিমের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন বা সংরক্ষণ বৃদ্ধিকে দায়ী করা হয়েছে।

তবে এ সময়ে ইউসিবির শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ (NOCFPS) উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে— ৭.০৬ টাকা, যেখানে আগের বছর তা ছিল ঋণাত্মক ৪.৭৬ টাকা। ঋণ বিতরণ বাড়ায় ক্যাশ ফ্লো বাড়লেও আমানতের প্রবৃদ্ধি পিছিয়ে থাকায় টেকসই রিটার্ন নিশ্চিত হয়নি।

এবি ব্যাংকের রেকর্ড লোকসান ও অনিয়মের ছায়া

অন্যদিকে এবি ব্যাংকের চিত্র আরও হতাশাজনক। ২০২৪ সালে ব্যাংকটির মোট লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ লোকসানের ঘটনা। শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২১ টাকা ২৮ পয়সা। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি গত বছরও কোনো লভ্যাংশ দেয়নি এবং এই বছরের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ৫ আগস্ট নির্ধারিত হলেও বিনিয়োগকারীরা হতাশ।

ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো এবং নিট সম্পদমূল্য (NAV) পরিস্থিতিও ভঙ্গুর। ২০২৪ সালে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ ছিল মাইনাস ৪২.২৩ টাকা এবং এনএভিপিএস নেমে এসেছে মাত্র ৭.১৯ টাকায়।

মূল সংকটের মূলে রয়েছে বছরের পর বছর ধরে পরিচালনায় অনিয়ম, ঋণ খেলাপি গ্রাহকদের আধিক্য এবং উদ্যোক্তাদের প্রভাব। বিশেষ করে সিকদার গ্রুপ, আশিয়ান সিটি, বেক্সিমকোসহ অনেক প্রভাবশালী গ্রুপের ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে, যেগুলোর সুদ আদায়ে ব্যর্থ এবি ব্যাংক।

বিশ্লেষণ ও বিনিয়োগ পরামর্শ

ব্যাংকিং খাতে আর্থিক সূচকের এ পতন বিনিয়োগকারীদের জন্য বিপজ্জনক সংকেত। ইউসিবি তুলনামূলকভাবে মূলধন রক্ষা করে চলতে পারলেও তাদের প্রবৃদ্ধির ধারা অনিশ্চিত। অন্যদিকে এবি ব্যাংকের গুরুতর লোকসান ও অনিয়ম প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার উদাহরণ হিসেবে সামনে এসেছে।

স্বল্পমেয়াদে এই দুই ব্যাংকে বিনিয়োগের ঝুঁকি বেশি। বিনিয়োগকারীদের উচিত এই ধরনের কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য, ক্যাশ ফ্লো, এবং ব্যবস্থাপনা কাঠামো বিশ্লেষণ করে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া।

উপসংহার

শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাত দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের আস্থার কেন্দ্রে থাকলেও ইউসিবি ও এবি ব্যাংকের সর্বশেষ আর্থিক চিত্র হতাশাজনক। সুসংহত অভ্যন্তরীণ কনট্রোল, দক্ষ ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালন কাঠামোতে স্বচ্ছতা ছাড়া ব্যাংকিং খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। এই প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা এবং তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ জরুরি হয়ে পড়েছে।