শেয়ারবাজারে চাঙ্গাভাব ফেরাতে বাজেটে বড় কর ছাড়ের আভাস

আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য আসছে একাধিক বড় কর ছাড়ের প্রস্তাব—যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজারে মন্দা ও বিনিয়োগ অনীহা কাটাতে এমন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

প্রস্তাবিত করছাড়ের মূল দিকগুলোতে রয়েছে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর ব্যবধান ৫% থেকে বাড়িয়ে ৭.৫% করা, সিকিউরিটিজ লেনদেনের ওপর অগ্রিম আয়কর (AIT) ০.০৫% থেকে কমিয়ে ০.০৩% করা এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্পোরেট করের হার ৩৭.৫% থেকে এক ধাপে ২৭.৫%-এ নামিয়ে আনার প্রস্তাব।

তালিকাভুক্তিতে বাড়তি উৎসাহ, শর্ত শিথিলের সম্ভাবনা

তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার বর্তমানে ২০% হলেও কঠোর শর্তের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান তা উপভোগ করতে পারে না। ফলস্বরূপ তারা ২২.৫% পর্যন্ত কর দেয়। অপরদিকে, অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মূল হার ২৫% হলেও শর্ত না মানায় প্রায়শই তাদের ২৭.৫% কর দিতে হয়। বাজেটে কর ব্যবধান ৭.৫% পর্যন্ত বাড়ানোর পাশাপাশি তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য শর্ত শিথিল করার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে, যা কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারমুখী করতে প্রণোদনা হিসেবে কাজ করতে পারে।

টার্নওভারে AIT হ্রাস: ব্রোকারদের স্বস্তি

শেয়ার লেনদেনে টার্নওভার কর বা AIT হার বর্তমানে ০.০৫%। এটি কমিয়ে ০.০৩%-এ নামানোর প্রস্তাব থাকছে এবারের বাজেটে। ইতিহাস বলছে, ২০০৫ সালে হারটি ০.০১৫% ছিল, যা ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ২০১১ সালে ০.১০% করা হয়। কিন্তু শেয়ারবাজার ধসের প্রেক্ষিতে সেটি পরে কমিয়ে ০.০৫% করা হয়, যা আজও বহাল রয়েছে। কর হার কমালে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর করের চাপ কমবে, যা লেনদেনে গতি আনবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

মার্চেন্ট ব্যাংকের কর হার কমছে ১০%

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর হার বহন করে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। বর্তমানে এ হার ৩৭.৫% হলেও এবারের বাজেটে তা কমিয়ে ২৭.৫% করার প্রস্তাব থাকছে। মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত আসছে বলে জানা গেছে। দেশে বর্তমানে ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে, যাদের বড় অংশই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি।

উপসংহার: আস্থার পুনর্গঠনেই বাজেটের দৃষ্টি

বাজেট প্রস্তাবিত এই করছাড়গুলো বাস্তবায়িত হলে বাজারে তারল্য বাড়বে, বিনিয়োগ উৎসাহ পাবে এবং দীর্ঘমেয়াদে একটি সুসংহত পুঁজিবাজার গঠনে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটা হতে পারে বহুল প্রত্যাশিত সুখবর।